চেন্নাই : বিগত চার পাঁচ দিন ধরে লাগাতার অতিবৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে চেন্নাইয়ে। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও আবার কোমর পর্যন্ত জলে ডুবেছে। জল যন্ত্রণায় নাজেহাল গোটা শহর। আর এই নিয়েই এবার চেন্নাই পৌর প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। শুক্রবার কিংবা শনিবারের মধ্যে যদি পরিস্থিতির কোনওরকম উন্নতি না হয়, তাহলে আদালত নিজে বিষয়টি দেখবে বলে শাসানি দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট।
হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত বিষয়ে জমা পড়া একটি আবেদনের শুনানি চলাকালীন বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, “২০১৫ সালের বন্যার পর থেকে আপনারা কী করেছেন? ভাবলে খারাপ লাগে, যে আমরা বছরের অর্ধেক সময় জলের জন্য হাহাকার করি এবং বছরের বাকি সময় আমরা বন্যার জলে ডুবে থাকি। জলযন্ত্রণায় মারাও যাচ্ছেন অনেকে।”
এদিকে এই জলমগ্ন পরিস্থিতির জন্য তামিলনাড়ুর তৎকালীন এআইএডিএমকে সরকারকে দায়ী করেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। স্ট্যালিনের বক্তব্য, “আগের সরকার কিছুই করেনি। আমরা সব সমস্যাগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করছি। আমরা জানি না তারা কেন্দ্রীয় সরকারের স্মার্ট সিটির টাকা নিয়ে কী করেছে। তারা কোনও কাজ করেনি এবং শুধু কমিশন খেয়েছে। আমরা একটি তদন্ত কমিশন গঠন করব।” তিনি আরও জানান, চেন্নাইয়ের জলমগ্ন পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা কমেছে।
গ্রেটার চেন্নাইয়ের কমিশনার গগনদীপ সিং বেদি জানিয়েছেন যে চেম্বারমবাক্কাম হ্রদ থেকে ধীরে ধীরে জল ছাড়া হচ্ছে। ২০১৫ সালের মতো হঠাৎ করে অতিরিক্ত জল ছাড়া হবে না বলেও জানান তিনি৷ এখনও পর্যন্ত দুই হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যা ২০১৫ সালে ছাড়া জলের তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
এদিকে আবহাওয়া দফতর আজ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। সেই সঙ্গে চেন্নাই পৌরনিগমের তরফে নিচু এলাকাগুলি থেকে সাধারণ মানুষদের উদ্ধারের জন্য ৪১ টি নৌকা তৈরি রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি পৌরনিগমের তরফে ৫৭০ টি বিশাল মাপের পাম্প এবং ২০০ টি ভারী পাম্পও তৈরি রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যুতিন করাত, আর্থ মুভার এবং জেনে রাখা হচ্ছে যাতে কোথাও গাছ ভেঙে বা উপড়ে পড়লে তা দ্রুত সরানো যেতে পারে।
তামিলনাড়ু সরকার আবহাওয়া দফতরের সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে চেন্নাই এবং চেঙ্গলপাট্টুতে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা এবং ত্রাণ শিবিরগুলির উপর নজর রাখার জন্য নোডাল অফিসার হিসাবে পাঁচজন শীর্ষ আমলাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তামিলনাড়ুতে এই টানা অতিবৃষ্টির জেরে চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে ২৬৩ টি ছোট বাড়ি এবং ৭০ টি পাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত, ত্রাণ শিবিরে ৩১৪ জনকে স্থান দেওয়া হয়েছে।