নয়াদিল্লি: ভারতে হবে উৎপাদন। তবে উৎপাদন হবে সারা বিশ্বের জন্য। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই মেক ইন ইন্ডিয়ার কথা ভাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প শুরু হতেই ভারতের বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র খুলে যায়। বিশ্বের উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউস হয়ে উঠেছে ভারত। বিশ্বের অন্যান্য দেশে পণ্য সবচেয়ে বেশি সরবরাহ করা হয় ভারত থেকে। রাশিয়ার সেনার জন্য ভারতের তৈরি বুট যায়। সারা বিশ্বে ক্রিকেট সরঞ্জাম যায় ভারত থেকে। ভারতের তৈরি সুপারসোনিক মিসাইলও কিনছে একাধিক দেশ।
২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। শপথ নেওয়ার কয়েকমাস পরই মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প শুরু করেন। এই দশ বছরে বিশ্বের উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ভারত। দেশের অর্থনীতি আরও গতি পেয়েছে মেক ইন ইন্ডিয়া শুরুর পর।
ভারতে উৎপাদন, বিশ্বের জন্য উৎপাদন-
মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভারত এখন বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। একটা সময় ছিল, যখন ৮০ শতাংশ মোবাইল ফোন বিদেশ থেকে ভারতে আসত। এখন ভারতে ব্যবহৃত ফোনের ৯৯.৯ শতাংশ এদেশেই তৈরি হয়। ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, ইট্য়ালি, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ একাধিক দেশে মেড-ইন-ইন্ডিয়া মোবাইল ব্যবহৃত হয়। শুধু মোবাইল নয়, মেক ইন ইন্ডিয়ার ফলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, সেমিকন্ডাক্টর, রেলের সরঞ্জাম-সহ একাধিক পণ্য উৎপাদনের পাওয়ার হাউস হয়ে উঠেছে ভারত। এছাড়াও আরও একাধিক পণ্য রয়েছে, যেগুলি মেক ইন ইন্ডিয়া শুরু হওয়ার পর বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নিয়েছে।
রাশিয়ার সেনার জন্য বুট তৈরি-
বিহারের হাজিপুরে রাশিয়ার সেনার জন্য বুট তৈরির কারখানা হয়েছে। কৃষিপণ্যের জন্য পরিচিত হাজিপুর আজ রাশিয়ার সেনার জন্য বুট তৈরিতে বিখ্যাত। ৩০০ জন কর্মী এই কাজে যুক্ত। তার মধ্যে ৭০ শতাংশ মহিলা। গত বছর ১৫ লক্ষ জোড়া বুট সরবরাহ করা হয়েছে। যার মূল্য ১০০ কোটি টাকা।
ভারতের তৈরি বাইসাইকেল-
বিশ্বের বাইসাইকেল রাজধানী বলা হয় নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডমকে। সেখানেই যাচ্ছে ভারতে তৈরি বাইসাইকেল। শুধু আমস্টারডম নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে মেড ইন ইন্ডিয়া বাইসাইকেল। ব্রিটেন, জার্মানিতে পাড়ি দিচ্ছে ভারতের বাইসাইকেল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনের তৈরি বাইসাইকেলের চেয়ে ভারতের বাইসাইকেল অনেক মজবুত। তাই, ওইসব দেশে ভারতের বাইসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে।
আমুল-দ্য টেস্ট অব ইন্ডিয়া-
গুজরাটে তৈরি আমুল দুধ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া যায়। এবার আমুল দুধ পৌঁছে গিয়েছে মার্কিন মুলুকেও। দুধ ছাড়াও দই, পনীর, আইসক্রিম, চকোলেট-সহ আমুলের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ৫০টির বেশি দেশে রফতানি করা হয়।
কাশ্মীরের উইলো ব্যাটের চাহিদা বাড়ছে-
বিশ্বের একাধিক ক্রিকেট খেলীয় দেশে কাশ্মীরের উইলো কাঠের তৈরি ব্যাটের চাহিদা বাড়ছে। ২০২৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড থেকে প্রচুর অর্ডার পেয়েছিলেন এখানকার কর্মীরা। ১৭ জন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার কাশ্মীরের উইলো কাঠের ব্যাট ব্যবহার করেন। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাশ্মীরের উইলো কাঠের তৈরি ব্যাটের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কাশ্মীরের উইলো কাঠের ব্যাটের GI ট্যাগ পেতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে স্থানীয় অর্থনীতি আরও গতি পাবে।
ফিলিপাইনসে পাড়ি ভারতের ব্রহ্মোস শক্তির-
ভারতে তৈরি ব্রহ্মোস সুপারসোনিক ক্রুজ মিসাইল কিনেছে ফিলিপাইনস। ফলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে এগিয়ে চলেছে ভারত।
আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে UPI-
অনলাইনে টাকা লেনদেন। মোবাইল থেকে এক ক্লিকেই টাকা লেনদেনের জন্য ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, ভূটান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সিঙ্গাপুর এবং নেপালের মতো দেশ UPI গ্রহণ করেছে।
অ্যামাজনের ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও সাইবার মনডে সেলসে বাড়ছে ভারতের পণ্য-
আন্তর্জাতিক ই-কমার্স বাজারে ক্রমশ বাড়ছে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা। আমেরিকার বাজারে অ্যামাজনের ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও সাইবার মনডে সেলসে আধিপত্য বিস্তার করেছে ভারতীয় পণ্য। ফলে এটা স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।