পানাজি: লক্ষ্য ২০২৪ লোকসভা ভোট। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের স্টিয়ারিং নিজের হাতেই রাখতে চান মমতা। আর তাই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে তৎপর তিনি। ত্রিপুরার পর এবার গোয়াতেও সংগঠন বিস্তার শুরু করেছে তৃণমূল। দলে যোগ দিয়েছেন সেখানকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা লুইজিনহো ফেলেইরো। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্ব আরও জোরদার করতে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে জোড়াফুল। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনদিনের গোয়া সফরের থেকেই তা স্পষ্ট। আজ বিকেলেই গোয়ায় পৌঁছে যাচ্ছেন মমতা।
রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে মমতার জন্য ত্রিপুরার থেকেই কঠিন লড়াই গোয়ায়। ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য। বাংলার রাজনৈতিক গতিবিধি সম্পর্কেও ত্রিপুরার একটি বড় অংশের আমজনতা যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। তার উপর ভাষাগত একটা সুবিধা তো রয়েছেই ত্রিপুরাতে। কিন্তু গোয়ায় পায়ের তলায় মাটি পেতে গেলে, কাজটা এতটা সহজ হবে না মমতার জন্য। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, প্রথমত ভাষাগত একটি ব্যবধান, তার উপর গোয়ায় মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনলেও তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা, যাঁরা প্রায়ই গোয়ায় উড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের কতটা চেনেন, তা নিয়ে একটি সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। আর এই পরিস্থিতিতেই আজ সৈকত শহরে জোড়াফুলের অস্তিত্ব আরও জোরদার করতে যাচ্ছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো।
তিন দিনের ঠাসা কর্মসূচি। ধর্মস্থান থেকে জনবহুল এলাকা, সফর সূচিতে বাদ নেই কিছুই। দলীয় সূত্রে খবর, মন্দির, গির্জা থেকে জনবহুল বাজার কিছুই বাদ দেবেন না ‘নেত্রী’। অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে পদযাত্রার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। এর পাশপাশি, গোয়ার বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে চায়ের আসরেও বসতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। চা চক্রে আমন্ত্রিত গোয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক, সাংবাদিক এবং অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। তিনদিনের সফর সূচিতে গোয়ার মৎসজীবীদের সঙ্গে আলাপচারিতার পরিকল্পনাও রয়েছে মমতার। তৃতীয় দিনে গোয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি মধ্যাহ্নভোজে বসবেন তিনি। প্রায় ৮০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে হতে পারে সেই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন।
তৃণমূলের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, তৃণমূল কংগ্রেস এর আগে পূর্বাঞ্চল কিংবা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাইরে সেভাবে পা রাখেনি। কিন্তু এবার যে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মমতা। তার আগে সর্বভারতীয় স্তরে দলের গ্রহণযোগ্যতা, সর্বোপরি মমতার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে নেওয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর তার জন্যই সম্ভবত গোয়াকে বেছে নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
সব মিলিয়ে গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে জোড়াফুলের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করতেই এই সফর বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশ। তবে তৃণমূলের জন্য গোয়ার রাজনীতি একেবারে নতুন নয়। এর আগে ২০১২ সালেও গোয়া অভিযানে নেমেছিল তৃণমূল। তখন অবশ্য এতটা আঁটসাট বাঁধেননি মমতা। সেই বার নির্বাচনে একটি মাত্র আসনে প্রার্থী দিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। তবে সেই আসনে আশাজনক কোনও ফল করতে পারেনি মমতার দল। ফিরতে হয়েছিল খালি হাতেই। কিন্তু এবার পুরোপুরি তৈরি হয়ে গোয়ার ময়দানে নামছেন মমতা।
আরও পড়ুন : TMC in Goa: মমতার সফরের আগে তুঙ্গে তরজা, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ তৃণমূল