কলকাতা: বছরের শুরুতেই একটা ভাল খবর। কলকাতার দাউদি বোহরা সম্প্রদায় তাদের গোষ্ঠীতে ১৬ বছরের নীচে ছেলেমেয়েদের মোবাইল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত?
আগেই অস্ট্রেলিয়া সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান। এদেশে সরকার ব্যান করার রাস্তায় যাচ্ছে না। কারণ, শুধুমাত্র পড়াশোনার কারণেই এখন নানা সময়ে হাইস্কুল পড়ুয়াদের স্মার্টফোন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকসেস দরকার হয়। তবে, নতুন নিয়মে বলা হয়েছে যে এইবার থেকে ১৮ বছরের নীচে ছেলেমেয়েরা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলতে চায়, তাহলে তাদের অভিভাবকদের সম্মতি
লাগবে।
বিষয়টি কীভাবে হবে, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। এই জন্য সাধারণ মানুষের মতামত চাওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে সংসদে পাশ হয় ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ আইন। প্রায় ১৪ মাস পর সেই আইনের রুল বা বিধির
খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা আছে মাইনরদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলতে মা-বাবা-র সম্মতি লাগবে। mygov.in-এ খসড়াটা দেওয়া আছে। সেটা পড়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিজেদের মতামত জানাতে পারবে সাধারণ মানুষ।
এই বিধির উদ্দেশ্য হল, মাইনর অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্কদের ব্যক্তিগত তথ্যের যাতে অপব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করা। আজকের এই বিগ ডেটার যুগে ইন্টারনেটে আমাদের সবার ফুটপ্রিন্ট রোজ কোনও না কোনওভাবে কোথাও না কোথাও রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। তবে, নাবালকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে গেলে সেটা আরও মারাত্মক।আইনে এও বলা আছে কারও পার্সোনাল ডেটা চুরি গেলে সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
ভালো দিক হল এটা যে, মা-বাবারা অন্তত জানবেন, তাঁদের সন্তান সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। এখনকার অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা যে কোথায় কী করে বেড়াচ্ছে, বোঝা তো খুবই মুশকিল। আর, নতুন সরকারি নিয়মের ফলে পরোক্ষে যে ভালোটা হচ্ছে, সেটা হল, মাইনরদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশন কমার একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
সমাজমাধ্যমে ট্রোলড হয়ে কিংবা বুলিয়িংয়ের শিকার হয়ে আর্লি টিন-এজে আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। লেখাপড়া সব জলাঞ্জলি যাচ্ছে। এইসমস্ত হয়ত একটু কমতে পারে। মা-বাবাকে না জানিয়ে আর ইচ্ছেমতো পঞ্চাশটা প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না ছোটরা। এবার প্রশ্ন হল, অভিভাবকের সম্মতি আছে কিনা, তা যাচাই হবে কীভাবে। মোটের ওপর যেটা বলা হচ্ছে যে মা-বাবা-র সরকারি পরিচয়পত্র আপলোড করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলো কীভাবে সেই পরিচয়পত্র যাচাই করবে। তারা যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সেটা ধরা যাবে কী করে। এই রকম সব গ্রে এরিয়া কিছু আছে। এইসব বিষয়েই সরকারি ওয়েবসাইটে আপনারা আপনাদের মতামত জানাতে পারেন। যাতে বিষয়টা ফুল প্রুফ হয়। একজন বিশিষ্ট মনোবিদ বলেন, “আমরা বড়রাও তো সোশ্যাল মিডিয়ার যন্ত্রণায় ভুগছি। সন্তান এসে কনসেন্ট চাইলে হয়ত আমরাও একটু সতর্ক হব”।