সৌরভ দত্ত: তিনদিনের জ্বর কিছুতেই নামতে চাইছিল না। হাতে-পায়ে ফোলা ভাবের সঙ্গে চোখ, ঠোঁট লাল হয়ে যায় মেদিনীপুরের বাসিন্দা বছর ছয়েকের শিশুর। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রত্যক্ষ না হলেও শিশুর অসুস্থতার জন্য পরোক্ষে দায়ী কোভিডই (COVID 19)! চিকিৎসকদের পরিভাষায় যে অসুখের নাম, ‘মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম ইন চিল্ড্রেন’ (এমআইএসসি)।
তবে সবসময় কোভিড যে এই রোগের পরোক্ষ কারণ হবে তা কিন্তু নয়। ক্ষেত্রবিশেষে শিশু-কিশোর দেহে এমআইসি’র আগমনের পিছনে সরাসরি করোনার প্রভাব থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকদের একাংশ জানান, এই বছর এপ্রিলে দেখা যায়, লন্ডন, ইতালিতে শিশু-কিশোরেরা জ্বরে আক্রান্ত হলে তাদের চোখ-ঠোঁট লাল হয়ে যাচ্ছে। সারা শরীরে লাল লাল দাগের (র্যাশ) পাশাপাশি হাত-পা ফুলে যাচ্ছে কয়েকজনের। কিছু ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে অঙ্গ বিকল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের উপরেও চাপ পড়ে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগের কারণে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিপত্তি ঘটছে। বিদেশের গন্ডি অতিক্রম করে এখন এদেশেও এমআইএসসি’র খোঁজ মিলছে বলে জানিয়েছেন শহর কলকাতার চিকিৎসকেরা।
‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথে’র শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি জানান, জুন-জুলাইয়ে কলকাতায় এই অসুখে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলছিল। অগস্ট থেকে সেই সংখ্যা কমলেও ডিসেম্বরে তার সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর কথায়, “এ পর্যন্ত ৭০ জন এমআইএসসি রোগী পেয়েছি। তার মধ্যে ৪০ জনকে আইসিইউয়ে দিতে হয়েছে। এই রোগীদের হয় আগে কোভিড হয়েছিল, নয় বাড়ির কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কোভিড সংক্রমণ চূড়ায় থাকার ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।”
আরও পড়ুন: ছেলের কাটা হাত জুড়তে ছয় হাসপাতালের দুয়ারে বাবা-মা! জুটল কেবল প্রত্যাখান
রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি কোভিড হাসপাতাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ চিকিৎসক মিহির সরকার জানান, মূলত দু’ধরনের ‘মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম ইন চিল্ড্রেন’ দেখা যাচ্ছে। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরে এমআইএসসি’তে আক্রান্ত হওয়ার নজির যেমন রয়েছে, তেমনই দেহে ভাইরাসের উপস্থিতির মধ্যেও এই রোগে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে। বস্তুত, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এ পর্যন্ত যে ৫০ জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছে তারা সকলে কোভিডের মধ্যে ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। সরকারি কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, “কাওয়াসিকি ডিজিজের মতো উপসর্গ থাকলেও এটা কাওয়াসিকি ডিজিজ নয়। গোড়ায় এই রোগ ধরতে পারলে চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল অনেকে টেস্ট করাচ্ছেন না।” ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, “করোনার কারণে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফল হল এমআইএসসি। তিনদিনের বেশি জ্বরের পাশাপাশি চোখ, ঠোঁটে লালভাব, হাত-পা ফুলে যাওয়া, সারা শরীরে র্যাশ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
আরও পড়ুন: করোনাই কাল, অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত কলকাতা বইমেলা