ছেলের কাটা হাত জুড়তে ছয় হাসপাতালের দুয়ারে বাবা-মা! জুটল কেবল প্রত্যাখান

১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এসএসকেএম, এনআরএস, আরজিকর হাসপাতালে জুটল শুধু প্রত্যাখ্যান। শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে হয়রানির খবর প্রকাশিত হলে বিকেলে আরজিকরের ট্রমা কেয়ারে গৌতমকে ভর্তি করানো হয়।

ছেলের কাটা হাত জুড়তে ছয় হাসপাতালের দুয়ারে বাবা-মা! জুটল কেবল প্রত্যাখান
ছেলের কাটা হাত জুড়তে ছয় হাসপাতালের দুয়ারে বাবা-মা! জুটল কেবল প্রত্যাখান
Follow Us:
| Updated on: Dec 26, 2020 | 9:51 PM

কলকাতা: ধানকলে ১৩ বছরের কিশোরের বাঁ-হাত কনুই থেকে কাটা পড়ে শুক্রবার সকালে। কাটা হাত জোড়া লাগার আশা কলকাতায় আসার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার জন্য দুর্ঘটনাগ্রস্ত কিশোর গৌতম মালকে নিয়ে কলকাতা পৌঁছন বাবা গোপাল মাল। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এসএসকেএম, এনআরএস, আরজিকর হাসপাতালে জুটল শুধু প্রত্যাখ্যান। শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে হয়রানির খবর প্রকাশিত হলে বিকেলে আরজিকরের ট্রমা কেয়ারে গৌতমকে ভর্তি করানো হয়।

শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা গোপালের বাঁ হাত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কাটা পড়ে। এদিন পরিজনেরা জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ভ্যানে ১১০ টাকা খরচ করে ছেলেকে প্রথমে মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান বাবা। হাতের অবস্থা দেখে গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তৎক্ষণাৎ কিশোরকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করেন। মুরারই থেকে ভাড়ার গাড়িতে রামপুরহাট যাওয়ার জন্য খরচ হয় ১২০০ টাকা। রামপুরহাটেও মেলে ‘রেফার’। অগত্যা ৩১৫০ টাকার বিনিময়ে গাড়িতে করে এবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে পৌঁছন কিশোরের পরিজনেরা। হাতের অবস্থা নিরীক্ষণ করে বর্ধমানের চিকিৎসকেরা এসএসকেএম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

শুক্রবার রাত নটা নাগাদ ছেলেকে নিয়ে এসএসকেএম পৌঁছন বাবা। ভোর চারটে পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বেড মেলেনি। এদিকে কিশোরের বাঁ হাতের ব্যান্ডেজ রক্তে ভিজে গিয়েছে। ছেলের ওই অবস্থা দেখে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে গোপাল জানতে চান, আদৌ বেড মিলবে তো! সদুত্তর আসেনি। তবে ‘পরামর্শ’ আসে এনআরএস নিয়ে যাওয়ার জন্য। রোগীর পরিজনেরা জানান, এনআরএসের ডাক্তারবাবুরা গৌতমকে দেখে বলেন, বাঁ হাত যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার চিকিৎসা কেবল আরজিকরেই সম্ভব! দেড়শো টাকা ট্যাক্সি ভাড়া করে এদিন সকালে আরজিকরে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা আবার জখম কিশোরকে এনআরএসে ফিরিয়ে দেয়। এনআরএস থেকে আবার আরজিকরের ট্রমা কেয়ারে।

আরও পড়ুন: মেডিক্যালে ‘ইকমো’ আছে, কিন্তু তা চালাবেন কে? মোটা অঙ্ক খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালই ভরসা

এরপরও সরকারি হাসপাতালে শয্যা-প্রাপ্তির পথ মসৃণ হয়নি। দুপুর দেড়টা নাগাদ এক পরিচিতের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে দুর্ভোগের কথা জানান রোগীর পরিজনেরা। সেই খবর সম্প্রচারিত হওয়ার পরে আরজিকর কর্তৃপক্ষ ট্রমা কেয়ারে ওই কিশোরকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। গৌতমের মা বলেন, “কাল থেকে ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি বলছে অন্য হাসপাতালে যেতে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে ছেলের কাটা হাত জোড়া লাগতে পারত। এখন আর সে সুযোগ নেই।”

একজন কিশোরকে দেড় দিন ধরে ছ’টি হাসপাতাল কেন ঘুরতে হল? স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।

আরও পড়ুন: বাংলায় করোনা আক্রান্ত আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু