Modi@9: আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের মেলবন্ধন, অতীতকে অক্ষত রেখেই ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
Modi@9: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন। এই কাজটাই চমত্কারভাবে করে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভারতের অগ্রগতির জন্য এই ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।
অক্ষিত জোশী
নয়া দিল্লি: জ্ঞান হওয়ার পর যারা মনমোহন সিং-কে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছে, তাদের মনে হতেই পারে দেশের শাসকরা বোধহয় প্রধানত ইংরেজিভাষী, পশ্চিমী প্রভাবান্বিত এবং মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন। শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, সলমন খুরশিদ বা মণিশঙ্কর আইয়ারের মতো ইউপিএ সরকারের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীদের দিকে তাকালেও, এমন কথাই মনে হত। কাজেই এই প্রজন্মের সদস্যরা ভাবতেই পারে, শাসক বোধহয় এই রকমই হয়। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের গোড়ার দিকে অর্থনীতির উদারীকরণের পরে কেবল টিভি এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যের উত্থান ঘটেছিল। যা, এই প্রজন্মকে পশ্চিমী বিষয়বস্তু এবং চিন্তাভাবনায় ডুবিয়ে দিয়েছিল। তারা যে পরিবেশে বড় হয়েছিল, সেই সমাজ ও সংস্কৃতি ছিল পশ্চিমী প্রভাবিত। কাজেই শাসক শ্রেণির মধ্যে এর প্রকাশ ছিল জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, এর অর্থ ছিল কয়েক সহস্রাব্দ ধরে চলে আসা, আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। সময়মতো অবস্থাটা না পাল্টালে পুরো একটি প্রজন্মের শিকড়ের সঙ্গে যোগ হারিয়ে যেতে পারত। ২০১৪ সালে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় অবশ্য, এই ট্র্যাজেডি এড়ানো গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী মোদী হলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি দেশীয় শিক্ষায় শিক্ষিত একজন সাধারণ মানুষ। নিজের কৃতিত্বে তিনি শাসন ক্ষমতার শীর্ষে উঠে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি হলেন দেশের সাংস্কৃতিক চেতনার ফসল। যে সাংস্কৃতিক চেতনার জন্ম ১৯৪৭-এ হয়নি, সেই বৈদিক যুগ থেকেই রয়েছে। ভারতীয় চিন্তাধারায় এই নবজাগরণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই চিন্তাধারায় আরও একটি মাত্রা যোগ করেছিলেন – আন্তর্জাতিক সুপারপাওয়ারগুলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সমস্ত দিক থেকে আধুনিকীকরণ। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন তবে ভারতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। পূর্ববর্তী দু-দুটি ইউপিএ সরকার এই ভারসাম্য রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এই মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য সেরা ব্যক্তি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী আর তিনি তা চমত্কারভাবে করেও দেখিয়েছেন। ভারতে যখন পুরানো এবং নতুনের এই সংমিশ্রণের সবথেকে বেশি প্রয়োজন ছিল, সেই সময়ই নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
বর্তমান বিশ্বে, বিশ্বায়ন ঘোর বাস্তব। এই অবস্থায় ভারতের পক্ষেও বিশ্বায়নের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। আজ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। কাজেই এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারে না ভারতও। বর্তমান প্রজন্ম ঐতিহ্যগত শিক্ষাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই আধুনিক, পশ্চিমী শিক্ষা গ্রহণ করে। তাদের শিক্ষার জন্য এই দুটি সুবিধাই গ্রহণ করা অপরিহার্য। কারণ, তা ভারতের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। দেশের ‘অমৃত কাল’-এ ‘নতুন ভারত’ তৈরির সময় প্রধানমন্ত্রীও এটি উপলব্ধি করেছেন আর ভারতের লক্ষ্যে পরিণত করেছেন। আসলে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই, প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘টেকনোক্র্যাট’ মন্ত্রী হিসাবে পরিচিত। প্রযুক্তির প্রতি তাঁর আগ্রহ এবং বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, সেই বিষয়ে তাঁর সচেতনতাই তাঁকে ‘নতুন’ ভারত তৈরিতে সক্ষম করে তুলেছে। তাঁর অন্যতম ফ্ল্যাগ-শিপ প্রকল্প, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-এর উপর তাঁর জোর এবং সমস্ত ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রসার ও বাস্তবায়নই তাঁকে অন্যান্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর থেকে অনন্য করে তুলেছে।
আসলে, আজকের ভারতের মতো তিনিও ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার পথে হাঁটেন। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও তিনি আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, একের পর এক বিদেশ সফর করেছিলেন তিনি। এর ফলে তিনি আরও বেশি পশ্চিমীমুখী হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু, তা হয়নি। পরিবর্তে, তিনি গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিদেশে ভারতীয় চিন্তাধারার প্রচার করেছিলেন। যার ফলে পশ্চিমী দেশগুলি আরও বেশি ভারতীয় হয়ে উঠেছিল। আধুনিকতাবাদী এবং ঐতিহ্যবাদী দুই পক্ষেরই কথা শোনার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। এটাই তাঁকে ভাল এবং নিরপেক্ষ শাসনের মডেল করে তুলেছে। এই দুই দিকের বিশেষজ্ঞ এবং অতিথিদেরই তিনি তাঁর বিভিন্ন প্রকল্পগুলির অংশ করে নেন। এটা তাঁর পুরনো এবং নতুন চিন্তাগুলিকে একীভূত করার ক্ষমতার আরেকটি প্রমাণ।
যোগব্যায়ামের প্রচার থেকে ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ‘ইন্টারনেট অব থিংস’, অতীত এবং ভবিষ্যৎ দুই বিষয়েই তাঁর উপলব্ধির স্পষ্টতা, এখন দেশকে বিশ্ব নেতা হিসেবে নতুন ভূমিকায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামকরণ থেকে শুরু করে তাঁর পোশাক, তাঁর ভাষা এবং তাঁর ‘মন কি বাত’ বক্তৃতায়, প্রধানমন্ত্রী মোদী সত্যি সত্যি আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের চেতনাকে একত্রিত করেছেন। অতি সম্প্রতি উদ্বোধন করা নতুন সংসদ ভবন তাঁর এই চিন্তারই আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর উত্তরাধিকারে, যা নিশ্চিতভাবে দীর্ঘকাল দেশের চেতনায় থেকে যাবে।