ভুবনেশ্বর: শুক্রবারের বিভীষিকাময় রাত এখনও সকলের মনে স্পষ্ট। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালগাড়ি ও ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের (Coromandel Express Accident) জেরে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮৮ জন যাত্রী। আহত ৭০০-রও বেশি। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অনেকে। দুর্ঘটনার দুইদিনের মধ্যেই রেললাইন সারাই করে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। তবে চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন হাসপাতালের মর্গের বাইরে। সেখানে লম্বা লাইন মানুষের, যাদের পরিজনরা শুক্রবার ওই অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করে যাচ্ছিলেন। মৃতদেহের স্তূপের মধ্যে থেকে প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা যেমন লড়াই হয়ে উঠেছে, তেমনই আবার অনেকের দাবি, তাদের পরিবারের সদস্যের মৃতদেহ অন্য কারোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওড়িশার (Odisha) হাসপাতালে এখন অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেহ চিহ্নিতকরণ।
শুক্রবার করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় যে ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জনের দেহ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, দেহ পড়ে থাকায় তাতে পচন ধরতে শুরু করেছে। দেহ সংরক্ষণের জন্য পারাদ্বীপ থেকে আনানো হয়েছে বিশেষ কন্টেনার। যাদের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হবে। এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন সংশয়। বেশ কিছু পরিবারের দাবি, তাদের প্রিয়জনের দেহ অন্য কারোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্য়েই বহু দেহের সৎকারও হয়ে গিয়েছে। ফলে দেহ অদল-বদল হয়ে গেলেও প্রশাসনের কিছু করার থাকবে না।
এই সংশয় যাতে আর না হয়, তার জন্য গতকালই ওড়িশা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সমস্ত দেহের ডিএনএ পরীক্ষা করানোর পরই পরিবারের হাতে দেহ হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু যাঁরা বলছেন, দেহ অদল-বদল হয়ে গিয়েছে, তাঁদের কী হবে? ভুবনেশ্বর মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কমিশনার জানান, নিকট আত্মীয় নন বা রক্তের সম্পর্ক নেই, এমন অনেকে দেহ নিতে আসছেন। ফলে দেহ শনাক্তকরণে দেরি হচ্ছে। দেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যাতে ত্রুটিমুক্ত ও স্বচ্ছ হয়, তার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা অবধি দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপালের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী মীরা দেবী ও তাঁর ১৬ বছরের ছেলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়। দেহ শনাক্তকরণের পর তা নিতে গেলে, এইমস কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে জানানো হয়, ভুলবশত অন্য কারোর কাছে সেই দেহ চলে গিয়েছে। অন্য়দিকে রাজ্যের বাসিন্দা জ়াকারিয়া লস্কর নামক এক ব্য়ক্তিও জানান, তিনি তাঁর কাকা আবু বাকর লস্করের দেহ নিতে এসেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, মালদার বাসিন্দা এক মহিলার কাছে সেই দেহ চলে গিয়েছে।