নয়া দিল্লি : পণের দাবিতে বাড়ির বউকে দিনের পর দিন অত্যাচার, তারপর মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো অভিযোগ এ দেশে কম নেই। প্রতিনিয়ত সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে সে সব ঘটনা। তবে একজন পুত্রবধূকে আর একজন মহিলা হয়ে তাঁর শাশুড়িরই যে সবথেকে বেশি নিরাপত্তা দেওয়া উচিৎ, সেকথাই উঠে এল শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে। মঙ্গলবার এরকমই একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছে যে, একজন শাশুড়ি যদি তাঁর পুত্রবধূকে সুরক্ষা না দেয়, তাহলে সে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি এমআর শাহ ও বিচারপতি বিভি নাগারত্নার বেঞ্চে ছিল সেই মামলার শুনানি। অভিযুক্ত শাশুড়িকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।
এ দিন পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে, ‘যখন একজন মহিলাকে অর্থাৎ নিজের পুত্রবধূকে আর একজন নিজে মহিলা হয়ে অত্যাচার করে, তখন তা আরও গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি একজন মহিলা (শাশুড়ি) আর এক মহিলা (পুত্রবধূ)কে নিরাপত্তা না দেয়, তাহলে তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়েন।’
মাদ্রাজ হাই কোর্টে ৪৯৮এ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এক মহিলা। তাঁর করা আবেদনের ভিত্তিতেই মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় মামলার সূত্রপাত।
মৃত গৃহবধূর মা অভিযোগে জানান, তাঁর জামাই, মেয়ের শ্বশুর ও শাশুড়ি এবং ননদ দিনের পর দিন তাঁর মেয়ের ওপর অত্যাচার করেছে। পণ হিসেবে গয়না চেয়ে অত্যাচার করা হত বলে অভিযোগ। তাঁর দাবি, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন তাঁর মেয়ে।
চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। মাদ্রাজ হাইকোর্টে প্রত্যেকে দোষী সাব্যস্ত হন। ৪৯৮এ ধারায় তাঁদের এক বছরের জেল ও ১০০০ টাকা জরিমানা এবং ৩০৬ ধারায় (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) ২০০০ টাকা জরিমানা ও তিন বছরের জেলের শাস্তি দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অভিযুক্ত শাশুড়ি। আদালতের নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে, যে গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে, তাঁর ওপর শাশুড়ির অত্য়াচারের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের তরফে এও বলা হয়েছে যে, পুত্রবধূর প্রতি আরও একটু সংবেদনশীল হওয়া উচিৎ ছিল শাশুড়ির।
শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ উল্লেখ করেছে, ‘এই ক্ষেত্রে গৃহবধূর স্বামী বাইরে থাকতেন, তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গেই থাকতেন। তাই শাশুড়ি হিসেবে তাঁরই দায়িত্ব থাকা উচিৎ ছিল পুত্রবধূর দেখভাল করা। তা না করে দিনের পর দিন হেনস্থা করা হয়েছে, অত্য়াচার করা হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের প্রতি কোনও সহমর্মিতা দেখানো উচিৎ নয়, অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিৎ।’
তবে এই ঘটনা ২০০৬ সালের। বর্তমানে অভিযুক্তের বয়স ৮০-র কাছাকাছি। তাই জেলের মেয়াদ কমিয়ে এক বছরের বদলে তিন মাস করা হয়েছে ও হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী, জরিমানা বহাল থাকছে।
আরও পড়ুন : UP Assembly Election 2022: ‘বিজেপি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি, বিকল্প হিসেবে মানুষ সপাকেই চায়’, দাবি অখিলেশের