ভোপাল : আনন্দ আয়োজন যে এইভাবে দুঃখে বদলে যাবে ভাবতে পারেনি সেই স্থলে উপস্থিত কেউ। পরিবেশ বিদ্যায় আমাদের শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের দিকগুলো তুলে ধরা হয় ঠিকই। কিন্তু সবটাই বইয়ের পাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তারস্বরে মাইক বাজিয়ে গান ও ডিজের তালে নাচ সমান তালে চলতেই থাকে। কিন্তু একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে এই ডিজেই কারও প্রাণ কেড়ে নিতে পারে তা ভাবা যায় না। ডিজের তালে পা মেলাতে মেলাতে ১৮ বছর বয়সী লাল সিং বুঝতে পারেনি এটাই তাঁর জীবনের শেষ নাচ।
মধ্য প্রদেশের উজ্জয়ন জেলার আম্বোডিয়া জেলায় বাড়ি লাল সিংয়ের। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাজপুরে গিয়েছিলেন তিনি। পুরোদমে বন্ধুর বিয়ের উদযাপন চলছে। সবাই হইচই করছে। নাচানাচি করছে। এক মুহুর্তের জন্যও কেউ টের পায়নি যে এই আনন্দ অনুষ্ঠানই কিছুক্ষণ পরে শোকের অনুষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে। গ্রাম থেকে ডিজে, ব্যান্ড পার্টি সমেত মহা সমারোহে বরকে নিয়ে শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। সেখানে ডিজে-র তালে তালে পা মেলাচ্ছিলেন লাল সিংও। এর মধ্যেই কোনও সতর্কবার্তা ছাড়া হঠাৎ সজ্ঞা হারান তিনি। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লাল সিং। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উজ্জয়নের কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে অন্য একটি হাসপাতালে রেফার করা হয়। উজ্জয়ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
লাল সিংয়ের ময়নাতদন্তে উঠে আসে যে, এই কিশোরের হৃদযন্ত্রে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। উজ্জয়ন হাসপাতালের এক চিকিৎসক ডঃ জিতেন্দ্র শর্মা বলেছেন, বিয়ের শোভাযাত্রায় উচ্চস্বরে ডিজের শব্দেই কিশোরের হৃদযন্ত্রে রক্ত জমাট বেঁধেছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, যখন কোনও বড় সাউন্ড সিস্টেম থেকে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয় তখন এটি শরীরে অস্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আমরা পরিবেশ বিজ্ঞানেও বহুবার পড়েছি যে, একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ডেসিবেলের উপরে শব্দ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিৎসক জানিয়েছেন যে, এর ফলে এই উচ্চস্বরে গান বাজানোয় মানবদেহের হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। লাল সিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত থেকে জানা গিয়েছে।