মুম্বই: উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের জেরে আরও কঠোর হল মুম্বই(Mumbai)-এ প্রবেশের বিধিনিষেধ। এবার থেকে যে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান মুম্বইয়ে অবতরণ করবে, তার সকল যাত্রীদেরই (International Travellers) বাধ্যতামূলকভাবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা (RT-PCR Test) করাতে হবে। মঙ্গলবার রাতেই মুম্বই প্রশাসনের তরফে একগুচ্ছ নয়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রে যে হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে বিগত কয়েকদিনে, তা ওমিক্রন ভ্য়ারিয়েন্টের কারণে হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখেই আন্তর্জাতিক যাত্রীদের উপর কড়া নজরদারি রাখতে নয়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিদেশ থেকে মুম্বইয়ে আগত সমস্ত যাত্রীকেই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। যদি কোনও যাত্রীর রিপোর্ট পজেটিভ আসে, তবে বিমানবন্দরেই ফের রুটিন আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করানো হবে।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের উপর কড়া নজরদারির পাশাপাশি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং(Contact Tracing), ১৪ দিনের একান্তবাসে (Quarantine) থাকার নিয়ম যাতে সঠিকভাবে পালন করা হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। বিদেশ ফেরত করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংগৃহীত নমুনাগুলির যাতে জিনোম সিকোয়েন্সিং(Genome Sequencing) হয়, তাও নিশ্চিত করা হবে।
মুম্বই প্রশাসনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিদেশ ফেরত যে সমস্ত যাত্রীদের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে, তাদের বিমানবন্দর ছেড়ে যেতে দেওয়া হলেও, এক সপ্তাহ বাড়িতে একান্তবাসে থাকতে হবে। যাদের রিপোর্ট পজেটিভ আসবে, তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাসের ব্যবস্থা করা হবে।
বিদেশ ফেরত যে সমস্ত করোনা রোগীদের উপসর্গ দেখা দেবে, তাদের আপাতত সেভেন হিলস হাসপাতালে ভর্তি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইবেন, তাদের জন্য বম্বে হাসপাতাল বা ব্রিচ ক্যানেডি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
উপসর্গহীন করোনা রোগীদের আপাতত বিকেসি বা কাঞ্জুমার্গ জাম্বো ফেসিলিটি সেন্টারে আইসোলেশনে রাখা হবে। এছাড়া রোগীরা চাইলে বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠান বা হোটেলেও থাকতে পারবেন। রাজ্য় সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মহারাষ্ট্রে প্রায় ৪ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ বাড়িতেই একান্তবাসে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য় দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৬০ জন। সোমবার শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৮২, অর্থাৎ একদিনেই ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে সংক্রমণে। এদের মধ্যে ৮৩৪ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তিকরাতে হয়েছে। ৫২জন রোগীকে মেডিকেল অক্সিজেনও দিতে হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৬৬।
মুম্বইতেও সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে এই ওমিক্রনই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টাতেই মহারাষ্ট্রে নতুন করে ৭৫ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। দেশে প্রায় ১৯০০ জন ওমিক্রন আক্রান্তের মধ্য়েও সর্বাধিক আক্রান্তের সংখ্যা মহারাষ্ট্রেই।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মুম্বইয়ে বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৭ হাজারের বেশি, এরমধ্যে ৪৪৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। শহরে এখনও অবধি ১৬টি কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে এবং ৩৬৯টি বিল্ডিংকে সিল করে দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে চরম অক্সিজেন সঙ্কট ও হাসপাতালে শয্যার আকাল দেখা দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়েই রাজ্য এবার আরও ভাল প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানান মুম্বইয়ের মেয়র। তিনি বলেন, “গতবার কী কী খামতি থেকে গিয়েছিল, তা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। হাসপাতাল ছাড়াও ৩০ হাজারেরও বেশি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অক্সিজেন প্ল্যান্টও কাজ করছে। প্রয়োজনীয় জনবলও রয়েছে, আমরা তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত।”