সাল ২০১২, দিল্লি। সাল ২০১৭, উন্নাও। সাল ২০১৮, কাঠুয়া। সাল ২০১৯, হায়দরাবাদ। সাল ২০২০, হাথরস। সাল ২০২১, মুম্বই। বদলেছে সাল, বদলেছে শহর, বদলায়নি নির্যাতনের ছবি। জাতীয় মানবধিকার কমিশনের রিপোর্ট বলছে ভারতে প্রতি আধ ঘণ্টায় একজন করে মহিলা ধর্ষিত হন। প্রতিদিনের হিসেবে সংখ্যাটা ৮৮। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ওই রিপোর্ট আরও বলছে, ভারতে বছরে অন্তত ৩২ হাজার ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। ২০১৮ সালেও মহিলাদের উপর অপরাধের হার ছিল ৫৮.৮ শতাংশ। সেখানে এক বছরেই তা বেড়ে হয় ৬২.৪ শতাংশ। আরও চিন্তার বিষয় হল, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনে দেখা গিয়েছে, ৯০ শতাংশেরও বেশি অপরাধী নির্যাতিতার পূর্ব পরিচিত। এদের মধ্যে মাত্র ২৭.৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই দোষ প্রমাণ হয়েছে।
নির্ভয়াকাণ্ডে যেমন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ৬ অপরাধীই। দিল্লি নির্ভয়াকাণ্ডের ভয়াবহতার উল্লেখ করতে গিয়ে শীর্ষ ন্যায়লয়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, “বিরলের থেকেও বিরলতম ঘটনা।” গণধর্ষণে সাজা হিসেবে ফাঁসি হয়েছিল মুকেশ সিং, বিজয় শর্মা, পবন গুপ্তা, অক্ষয় ঠাকুর সহ রাম সিংয়ের। নাবালক (১১ বছর) হওয়ায় রেহাই পেয়েছিল এক অপরাধী। এখন প্রশ্ন, এমন কঠোর শাস্তির পরও কেন নারী নির্যাতনের ছবিটা এতটাই কদর্য? কোনও ভয়ই কি কাজ করে না?
অপরাধীর অপরাধের মনস্তত্ত্বের পর্যালোচনা করার পর সিংহভাগ ক্ষেত্রেই জানা গিয়েছে, ধর্ষণের মতো ঘটনায় নেপথ্যে থাকে ‘বিকৃত কাম’। সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার যেমন মনে করেন, মিডিয়ায় বাণিজ্যিক স্বার্থে মেয়ে ও পুরুষ উভয়ের যৌনতাকে খারাপভাবে উপস্থাপনা করাই এই সামাজিক ব্যাধির জন্য অনেকাংশে দায়ী।
মুম্বইয়ে গণেশ চতুর্থীর রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রশাসনের ভূমিকাও। কী করছিল পুলিশ? মীরাতুন নাহার তাঁর মু্ম্বই অভিজ্ঞতার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, “নির্ভয়াকাণ্ড ঘটেছিল দিল্লিতে। দিল্লি সম্পর্কে আমাদের যে ধ্যানধারণা তাতে এই ধরনের ঘটনা বিশ্বাস করতে খুব বেশি কষ্ট হয় না। তার কারণ, দিল্লি সন্ধ্যার পর আর নিরাপদ শহর থাকে না, আমরা বহুদিন ধরেই সেটা জানি। কিন্তু মুম্বই সম্পর্কে আমাদের ধারণা কিন্তু অনেক উঁচু। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, মুম্বই নিরাপদ শহর হিসেবেই পরিচিত। সেখানে অটো, রিক্সাই বেশি চলে। ট্যাক্সি বেশি চলে না এবং অটো, রিক্সাচালকরাই বেশি নিরাপত্তা দেয়। একই সঙ্গে মুম্বইয়ের পুলিশও খুব সচেতন। সেই সব ব্যারিকেড ভেঙে যখন এরকম কাণ্ড ঘটেছে, তখন মুম্বই শহর নিয়ে আমার মনে বাস্তবতার যে ছবি ছিল, তা ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেল।”
সরকারকে মীরাতুন নাহারের পরামর্শ, “উদ্দীপনা, প্ররোচনা, উত্তেজক — মেয়ে পুরুষের সম্পর্ক যেন বিকৃত করে না দেখানো হয়, সরকারের উচিত সেবিষয়ে পদক্ষেপ করা। নতুবা মেয়েরা সম্ভোগের বস্তু হয়েই থেকে যাবে।”
আরেক সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ আবার মনে করেন, “অপরাধ প্রবণতাই অপরাধের কারণ। অপরাধী বিশ্বাস করে সে পার পেয়ে যাব। কিছু হবে না।” তিনি মনে করেন, “মেয়েদের সঙ্গে যা খুশি তাই করা যায়, এমন বদ্ধমূল ধারণা থেকে না বের হতে পারলে এই রোগের কোনও নিরাময় নেই।”
আরও পড়ুন: শরীর জুড়ে দগদগে ক্ষত, ভেন্টিলেটরে ৩৩ ঘণ্টার লড়াই শেষ মুম্বইয়ের নির্ভয়ার
সাল ২০১২, দিল্লি। সাল ২০১৭, উন্নাও। সাল ২০১৮, কাঠুয়া। সাল ২০১৯, হায়দরাবাদ। সাল ২০২০, হাথরস। সাল ২০২১, মুম্বই। বদলেছে সাল, বদলেছে শহর, বদলায়নি নির্যাতনের ছবি। জাতীয় মানবধিকার কমিশনের রিপোর্ট বলছে ভারতে প্রতি আধ ঘণ্টায় একজন করে মহিলা ধর্ষিত হন। প্রতিদিনের হিসেবে সংখ্যাটা ৮৮। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ওই রিপোর্ট আরও বলছে, ভারতে বছরে অন্তত ৩২ হাজার ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। ২০১৮ সালেও মহিলাদের উপর অপরাধের হার ছিল ৫৮.৮ শতাংশ। সেখানে এক বছরেই তা বেড়ে হয় ৬২.৪ শতাংশ। আরও চিন্তার বিষয় হল, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনে দেখা গিয়েছে, ৯০ শতাংশেরও বেশি অপরাধী নির্যাতিতার পূর্ব পরিচিত। এদের মধ্যে মাত্র ২৭.৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই দোষ প্রমাণ হয়েছে।
নির্ভয়াকাণ্ডে যেমন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ৬ অপরাধীই। দিল্লি নির্ভয়াকাণ্ডের ভয়াবহতার উল্লেখ করতে গিয়ে শীর্ষ ন্যায়লয়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, “বিরলের থেকেও বিরলতম ঘটনা।” গণধর্ষণে সাজা হিসেবে ফাঁসি হয়েছিল মুকেশ সিং, বিজয় শর্মা, পবন গুপ্তা, অক্ষয় ঠাকুর সহ রাম সিংয়ের। নাবালক (১১ বছর) হওয়ায় রেহাই পেয়েছিল এক অপরাধী। এখন প্রশ্ন, এমন কঠোর শাস্তির পরও কেন নারী নির্যাতনের ছবিটা এতটাই কদর্য? কোনও ভয়ই কি কাজ করে না?
অপরাধীর অপরাধের মনস্তত্ত্বের পর্যালোচনা করার পর সিংহভাগ ক্ষেত্রেই জানা গিয়েছে, ধর্ষণের মতো ঘটনায় নেপথ্যে থাকে ‘বিকৃত কাম’। সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার যেমন মনে করেন, মিডিয়ায় বাণিজ্যিক স্বার্থে মেয়ে ও পুরুষ উভয়ের যৌনতাকে খারাপভাবে উপস্থাপনা করাই এই সামাজিক ব্যাধির জন্য অনেকাংশে দায়ী।
মুম্বইয়ে গণেশ চতুর্থীর রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রশাসনের ভূমিকাও। কী করছিল পুলিশ? মীরাতুন নাহার তাঁর মু্ম্বই অভিজ্ঞতার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, “নির্ভয়াকাণ্ড ঘটেছিল দিল্লিতে। দিল্লি সম্পর্কে আমাদের যে ধ্যানধারণা তাতে এই ধরনের ঘটনা বিশ্বাস করতে খুব বেশি কষ্ট হয় না। তার কারণ, দিল্লি সন্ধ্যার পর আর নিরাপদ শহর থাকে না, আমরা বহুদিন ধরেই সেটা জানি। কিন্তু মুম্বই সম্পর্কে আমাদের ধারণা কিন্তু অনেক উঁচু। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, মুম্বই নিরাপদ শহর হিসেবেই পরিচিত। সেখানে অটো, রিক্সাই বেশি চলে। ট্যাক্সি বেশি চলে না এবং অটো, রিক্সাচালকরাই বেশি নিরাপত্তা দেয়। একই সঙ্গে মুম্বইয়ের পুলিশও খুব সচেতন। সেই সব ব্যারিকেড ভেঙে যখন এরকম কাণ্ড ঘটেছে, তখন মুম্বই শহর নিয়ে আমার মনে বাস্তবতার যে ছবি ছিল, তা ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেল।”
সরকারকে মীরাতুন নাহারের পরামর্শ, “উদ্দীপনা, প্ররোচনা, উত্তেজক — মেয়ে পুরুষের সম্পর্ক যেন বিকৃত করে না দেখানো হয়, সরকারের উচিত সেবিষয়ে পদক্ষেপ করা। নতুবা মেয়েরা সম্ভোগের বস্তু হয়েই থেকে যাবে।”
আরেক সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ আবার মনে করেন, “অপরাধ প্রবণতাই অপরাধের কারণ। অপরাধী বিশ্বাস করে সে পার পেয়ে যাব। কিছু হবে না।” তিনি মনে করেন, “মেয়েদের সঙ্গে যা খুশি তাই করা যায়, এমন বদ্ধমূল ধারণা থেকে না বের হতে পারলে এই রোগের কোনও নিরাময় নেই।”
আরও পড়ুন: শরীর জুড়ে দগদগে ক্ষত, ভেন্টিলেটরে ৩৩ ঘণ্টার লড়াই শেষ মুম্বইয়ের নির্ভয়ার