পটনা : মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সোমবার বলেন যে বিহারে জাতিশুমারি করার বিষয়ে আলোচনা করতে ২৭ মে সব দলের একটি বৈঠক ডাকার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। তবে তিনি জানান, এই বৈঠকের তারিখ সম্পর্কে সব দলের মতামত এখনও আসেনি। সকলের মতামত নেওয়ার পরে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি তিনি জানান, রাজ্যে কীভাবে জাতিশুমারি করা হবে, এই বৈঠকে সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, জাতিশুমারির এই ইস্যু নিয়ে নীতীশ ক্রমেই তেজস্বী যাদবের আরজেডির ‘ঘনিষ্ঠ’ হচ্ছেন। অপরদিকে বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ক্রমেই ফুটে উঠছে।
নিজের দলের জোট সঙ্গীর নাম না করেই এদিন শ্লেষ বাণ ছুঁড়ে দিয়ে নীতিশ বলেন, ‘এখনও সব দল এই বিষয়ে নিজেদের মতামত দেয়নি। আমরা সব দলের সঙ্গেই আলোচনা করছি। তবে কিছু দল এখনও এই বিষয়ে সহমত পোষণ করছে না। আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছি।’ উল্লেখ্য, বিজেপি এখনও এই সংক্রান্ত বৈঠকের বিষয়ে কোনও জবাব দেয়নি নীতীশকে। এই ইস্যুতে দুই জোটসঙ্গীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। উল্লেখ্য, আরজেডি নেতা তথা বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব জাতিশুমারি করার দাবিতে ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের হুঁশিয়ারি দিতেই এই নিয়ে পদক্ষেপ করেন নীতীশ। যদিও এই সংবেদনশীল ইস্যুটি বিজেপির সঙ্গে নীতীশের সম্পর্কে তিক্ততা আনতে পারে। এদিকে আরজেডির দাবি, সম্প্রতি লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে নতুন যে দুর্নীতির মামলা সাজিয়ে সিবিআই হানা দিয়েছে, তা আদলে নীতীশকে বিজেপির বার্তা। আরজেডির কথায়, বিজেপি নীতীশকে জানিয়ে দিতে চায় যে আরজেডির সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ হলে তাঁর পরিণতি কী হবে।
এদিকে নীতীশের ডেপুটি তথা বিজেপি নেতা তরকিশোর প্রশাদ এখনও জাতিশুমারি নিয়ে কোনও বাক্য ব্যয় করেননি। তবে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বিজেপি নীতীশের এই নীতির পক্ষে নয়। প্রসাদের কথায়, ‘আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করব এবং বিভিন্ন দিক বিবেচনা করব।’ উল্লেখ্য, কেন্দ্রের শাসক দল নীতিগতভাবে জাতিশুমারির বিরোধী। কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বলেছে যে জাতি-ভিত্তিক আদমশুমারি একটি বিভাজনমূলক অনুশীলন। কিন্তু বিহারের রাজনৈতিক দলগুলির যুক্তি, জনসংখ্যার বর্ণ বিভাজন জানার ফলে সমাজের সবচেয়ে অবহেলিতদের সাহায্য করার জন্য আরও ভালো নীতি তৈরি করতে পারে সরকার।
এর আগে গত বছর, বিহারের রাজনীতিবিদদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জাতিশুমারির বিষয়ে আলোচনা করতে দেখা করেছিলেন। সেই প্রতিনিধি দলে নীতীশ কুমার এবং তেজস্বী যাদব ছিলেন। এদিকে একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী দলীয় সভায় বলেন, ‘দেশকে জাতি ও বর্ণের ভিত্তিতে বিভাজনের চক্রান্ত করা হচ্ছে।’ এই আবহে মোদীর কথাতেই স্পষ্ট যে জাতিশুমারির পক্ষে বিজেপির ভোট যাবে না। এই আবহে জাতিশুমারি ইস্যুতে বিহারে নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ দেখা দেয় কি না, সেদিকেই নজর সবার। প্রসঙ্গত, এর আগেও নীতীশ কুমার বিজেপির হাত ছেড়ে আরজেডির সমর্থনে সরকার চালিয়েছিলেন। এবারও সেরকমই কিছু হবে কি না, তা সময়ই বলবে।