সী তে শ রা য়, চি কি ৎ স ক
বেশ কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে ব্রিটেনের মতো দেশগুলি বুঝতে পেরেছে যে আমাদের ভাইরাসের সঙ্গেই বাঁচতে শিখতে হবে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাস্ক ম্যান্ডেট এবং ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তুলে নেওয়ার কথা বলছেন। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশেও দেখা যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে, মনে করা হচ্ছিল যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের হাত ধরে এই ভাইরাস নির্মূল হবে। স্পষ্টতই, এই বিষয়টি অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে, কারণ ভাইরাসটি বারবার দেখিয়েছে যে এটি নিজেকে পরিবর্তিত করতে সক্ষম। ফলে এটি আমাদের পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।
উদাহরণস্বরূপ, একটি করোনা ভাইরাস-২২৯ই রয়েছে, যা সাধারণ ঠান্ডা লাগাতে পারে। প্রতি বছর সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শীতকালে এই ভাইরাস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মানুষের মধ্যে সর্দি সর্দি ভাব দেখা যায়। একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ, একবার সংক্রমণের পরে একজন ব্যক্তি প্রায় দুই বছর ধরে এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকে। এর মানে এমন নয় যে একজন ব্যক্তি প্রতি দুই বছর অন্তর সংক্রমিত হবেন। কারণ, একজন মানুষ সবসময় যে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসবেন এমন নয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে দুই থেকে চার বছরের মধ্যে, একজন ব্যক্তির শীতের মাসগুলিতে একটি সাধারণ সর্দি হওয়ার প্রবণতা থাকে। এই কারণেই ক্লুগ বলছেন যে কিছুটা সময়ের পরে অক্টোবর বা নভেম্বর থেকে শীতের মরশুম শুরু হলে আবার এই বাড়বাড়ন্ত হতে পারে।
বেশিরভাগই এখন এটি বিশ্বাস করছে যে ধীরে ধীরে সার্স-কোভ-২ (নভেল করোনাভাইরাস) চারপাশে থাকা অন্যান্য করোনা ভাইরাসগুলির মতো হয়ে উঠতে চলেছে। তবে কেউ জানে না যে এক্ষেত্রে ‘ডেল্টাক্রন’ উঠে আসবে কি না, যা ওমিক্রনের মতো গতিতে সংক্রমণ ছড়াবে এবং তা ডেল্টার মতো ভয়ঙ্কর হতে পারে। তবে এই গোটা ঝুঁকির বিষয়টিই তাত্ত্বিক। ভাইরাসের গতিবিধি সম্পর্কে কেউ কিছু আন্দাজ করতে পারে না। এতে জনগণের মনে অনিশ্চয়তা ও ভীতি তৈরি হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না।
আমরা জানি যে টিকা গুরুতর অসুস্থতা আটকে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখেছি যে ওমিক্রন ঢেউয়ের সময়ও টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বার্তাটি এখনও একই – আমাদের এই ভাইরাসের সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হবে। এর পাশাপাশি, আমাদের বুঝতে হবে, দীর্ঘ মেয়াদে নিজেদের ফিট এবং সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে ভাবতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাদের নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শারীরিক উন্নতির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। এখানে বার্তাটি হল, প্রত্যেককে তাদের দেহকে সেইভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তারা ভবিষ্যতে কোনও সময়ে করোনায় সংক্রমিত হন, তবে এটি সাধারণ সর্দির মতোই থাকবে এবং সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ডেল্টা আমাদের সাবধানী করে দিয়েছে। কারণ এটি দ্রুত শ্বাসনালীর ভিতরে যেতে পারে, যার ফলে শরীরে অক্সিজেন কমে যায় এবং এর ফলে মৃত্যু হয়। কিন্তু ওমিক্রন আমাদের দেখিয়েছে, এটি সেভাবে আচরণ করে না। শ্বাসনালীর উপরের অংশের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ থাকে। এর অর্থ কাশির মতো কিছু লক্ষণ এবং কখনও কখনও অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। কিন্তু, এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো নয়। এই পরিস্থিতিতে ২০১৯ -এর নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার পথকে আরও প্রশস্ত করতে পারে।
এটি (ওমিক্রন) একটি প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন যা ভাইরাস নিজেই কিছু একটা উপায়ে তৈরি করেছে। বিশ্বের এমন অনেক দেশ আছে যেখানে টিকা দেওয়ার হার মাত্র ৫-১০ শতাংশের কাছাকাছি। এই সব দেশে, ওমিক্রন অনেকটা টিকার মতো কাজ করতে পারে। এখনও যাদের ঝুঁকি বেশি রয়েছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। কিন্তু আমরা জানি, ডেল্টার তুলনায় আইসিইউতে ভর্তির হার এবং মৃত্যুর হার অনেকটাই কম।
এই মুহূর্তে যে বার্তাটি উঠে আসছে তা অনেক দিন ধরেই মনে করা হচ্ছিল। ওমিক্রন হল কোভিড-১৯-এর মহামারী পর্বের সমাপ্তি। তবে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের শেষ নয়। ভাইরাসটি আমাদের মধ্যেই টিকে থাকবে এবং সময়ে সময়ে যখন পরিস্থিতি অনুকূল হবে, তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। শীতের মরশুমে ভাইরাসটি আরও বেশি লোককে প্রভাবিত করতে পারে।
যেমন, ফ্লুর সমস্ত লক্ষণ দেখা সত্ত্বেও, কেউ গিয়ে ফ্লু পরীক্ষা করায় না। কোভিড-১৯ এর সঙ্গেও ঠিক এটাই ঘটতে যাচ্ছে। সহজ কথায়, আপনাকে করোনার জন্য সেই সময় আর পরীক্ষা করাতে হবে না বা লোকেদের হয়ত এক সপ্তাহের জন্য আইসোলেশনে রাখতেও দরকার পড়বে না।
ভারতে, আমরা মূলত দুইবার ফ্লু পাই। একবার বর্ষায় আর একবার শীতে। এর মানে হল যে কোনও ঋতুতে আমাদের ওমিক্রন প্রাদুর্ভাব হতে পারে। আমরা এখনও জানি না যে ভাইরাসটি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে কীভাবে আচরণ করবে। তবে যেটি বলা হচ্ছে তা হল ভাইরাসটি দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে এবং আরও বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক সংক্রমণের মাধ্যমে এটি একটি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে।
আমরা আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যা দেখছি, শীঘ্রই তা অন্য অঞ্চলের জন্যও হতে পারে। এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে, নির্দিষ্ট সময়ে এবং কিছু শর্ত সাপেক্ষে সংক্রমণ দেখা যাবে, যা ভাইরাসটিকে স্থানীয় করে তুলবে।
এরই মধ্যে, একটি নতুন ভ্যারিয়েন্টের উত্থানের আলোচনা সম্পূর্ণরূপে অনুমানভিত্তিক। মানব জাতি কখনও এই ধরনের ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করেনি। আমরা যদি ইনফ্লুয়েঞ্জার দিকে তাকাই, তাহলে প্রতি সাত থেকে দশ বছরে এর একটি মহামারী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি আরএনএ ভাইরাস এবং নভেল করোনা ভাইরাসও তাই। তবে, দুটির মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ফ্লু ২০১৯ সালের করোনা ভাইরাসের থেকে অনেক দ্রুত পরিবর্তিত হয়। তাই এটি সবসময় আমাদের চারপাশেই থাকবে।
বর্তমানে উদ্বেগের বিষয় হল, টিকা দেওয়ার হার অনেক জায়গাতেই কম রয়েছে এবং যারা ‘ইমিউনো কম্প্রোমাইজড’ তাদের মধ্যে একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট রূপ নিতে পারে। কিন্তু, সাধারণত এগুলি নিয়ে আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি।
এই কারণেই যে কোনও মূল্যে ভ্যাকসিনের সমতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমরা জানি যে ভ্যাকসিনগুলি ওমিক্রনের জন্য তেমন ভাল কাজ করে না। তবে তারা কিছু হলেও কাজ করে — একেবারেই সুরক্ষা কবচ না থাকার থেকে কিছুটি সুরক্ষা থাকা ভাল। ধনী দেশগুলিকে দরিদ্র দেশগুলিতে পুষ্টিতে বিনিয়োগ করতে হবে। যদি দরিদ্র দেশগুলিতে মানুষ সুস্থ থাকে, তবে একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট আর উদ্ভূত হবে না।
ভাইরাস আমাদের মানবিক শিক্ষা দিচ্ছে। আমরা নির্দিষ্ট দেশ বা সীমানার দিকে দেখতে পারি না। কারণ, ভাইরাস এসব মানে না। একটি মানব জাতি হিসাবে, আমাদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, জীবনধারা, খাদ্য, পছন্দ এবং প্রত্যেকের যত্ন নেওয়া দরকার। আপনার আশেপাশের দেশগুলি খেয়াল রাখা এই ক্ষেত্রে নিজের দেশের খেয়াল মতই ভাল।