নয়া দিল্লি: ৪৮ বছর পার হয়ে গিয়েছে। অনেকের মনে স্পষ্ট এখনও জরুরি অবস্থার (Emergency) ক্ষত। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi)-র পরামর্শে সংবিধানের ৩৫২ ধারা প্রয়োগ করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ অবধি জারি ছিল এই জরুরি অবস্থা। ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ২১ মাসের সময়কালকে ‘অন্ধকারময় সময়’ হিসাবেই উল্লেখ করা হয়। জরুরি অবস্থার ৪৮ বছর পার হলেও, এখনও ইন্দিরা গান্ধীর এই সিদ্ধান্ত নিয়েই আক্রমণের মুখে পড়তে হয় কংগ্রেসকে (Congress)। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায় এই জরুরি অবস্থা। এই জরুরি অবস্থায় কী কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর সরকার? কেনই বা এত বিতর্ক জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়ে?
জরুরি অবস্থার ইতিহাস জানতে গেলে, এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগে জানা প্রয়োজন। আগেও ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধ ও ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলেও, তার প্রভাব গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি। তবে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদ বাঁচানোর চেষ্টা। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন রাজ নারায়ণ। তাঁর অভিযোগ ছিল, অসৎ উপায়ে নির্বাচন করানো হয়েছে এবং নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১২ জুন এলাহাবাদ হাই কোর্টের তরফে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির মামলায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে। আদালতের তরফে রায় দেওয়া হয় যে আগামী ছয় বছর তিনি কোনও ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। আদালতের এই রায়ের ফলে ১৯৭১ সালে রায়বরেলিতে ইন্দিরা গান্ধীর জয় বাতিল করে দেওয়া হয়, লোকসভার আসন হারান তিনি। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, কিন্তু সেখানেও হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখা হয়। সাংসদ হিসাবে ইন্দিরা গান্ধী যে সমস্ত সুবিধা পেতেন, তা বন্ধ করে দিতে বলা হয়। তাঁর ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়ার রায় দেওয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরামর্শ দেন। এরপরই ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন মধ্য রাতের কয়েক মিনিট আগে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন। রাতভর সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ও ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণার বক্তব্য লেখেন।