নয়াদিল্লি: ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে’। লিখে গিয়েছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু, কেউ যখন জানতে পারেন, মৃত্যু ক্রমশ তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। অথচ কিছু করার নেই। তখন কেমন হয় তাঁর মনের অবস্থা? আজ থেকে ১২২ বছর আগে এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন আমেরিকার খনি শ্রমিকরা। বুঝতে পারছিলেন, বাঁচার কোনও আশা নেই। সেই অবস্থায় এক খনি শ্রমিক তাঁর স্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। যেখানে ছত্রে ছত্রে স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালবাসা, বাঁচার আকুতি। সেই চিঠিই এতদিন পর ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯০২ সালের ১৯ মে। টেনেসি শহরে একটি কয়লা খনিতে বিস্ফোরণ হয়। বন্ধ হয়ে যায় খনিমুখ। বিস্ফোরণের জেরে তৎক্ষণাৎ ১৯০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ভিতরে আটকে পড়েন ২৬ জন। নিজেদের বাঁচাতে তাঁরা খনির আরও ভিতরে চলে যান। কিন্তু, ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাঁদের। বুঝতে পারেন, বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তখন জ্যাকব ভাওয়েল নামে এক শ্রমিক তাঁর স্ত্রীকে চিঠি লেখেন। দেওয়ালে কিংবা কাগজে সেই চিঠি লিখেছিলেন তিনি।
স্ত্রী ও সন্তানদের বিদায় জানিয়ে মর্মস্পর্শী এই লেখা শুরু করেন জ্যাকব। সন্তানদের যতটা সম্ভব ভাল রাখতে স্ত্রী এলেনকে অনুরোধ করেন। স্ত্রীকে জ্যাকব লেখেন, “খারাপ পরিস্থিতিতে তোমায় রেখে যেতে হচ্ছে আমায়। আমার সন্তানদের মানুষ করার জন্য ঈশ্বরের উপর আস্থা রেখো। এলেন, আমার ছোট্ট লিলির খেয়াল রেখো। ঈশ্বরের উপর আস্থা রয়েছে ছোট্ট এলবার্টের।” এরপর স্ত্রীকে জ্যাকব লেখেন, “আমরা আহত হইনি। এখানে আমরা মাত্র কয়েকজন আছি। বাকিরা কোথায় রয়েছে জানি না। এলবার্ট তোমায় বলছে, স্বর্গে দেখা হবে। আমার সব সন্তানদের বলো আমাদের দু’জনের সঙ্গে স্বর্গে ফের দেখা হবে।” এই চিঠি থেকে স্পষ্ট জ্যাকব ও এলবার্ট খনির ভিতর আটকে পড়েছিলেন। খনির ভিতরের অবস্থা বর্ণনা করে জ্যাকব জানান, তাঁদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। একটু বাতাসের জন্য প্রার্থনা করছেন। স্ত্রীকে জ্যাকব লেখেন, “মনে হচ্ছে, তোমার সঙ্গে যদি থাকতে পারতাম। আমরা আর কয়েকজন বেঁচে রয়েছে। হে ঈশ্বর, আর একবার শ্বাস নিতে পারি।” শেষে স্ত্রীকে জ্যাকব লিখেছেন, “যতদিন বেঁচে থাকবে, আমাকে মনে রেখো। বিদায়।”
১৯০২ সালের লেখা এই চিঠিই এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক খনিশ্রমিকের মর্মস্পর্শী চিঠি। জ্যাকব-সহ ওই ২৬ জনের মৃত্যু হয় খনির মধ্যে। সবমিলিয়ে ওই খনিতে বিস্ফোরণে ২১৬ জনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। তবে ওই দুর্ঘটনার পর খনি শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)