নয়া দিল্লি: হাত না থাকলে একজন চিত্রশিল্পীর জীবনে আর কী থাকে? রঙ-তুলি-ক্যানভাস – এটাই তো তাঁর জীবন। যদি তুলি ধরার হাতই না থাকে, তাহলে তাঁর অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় দিল্লির এক চিত্রশিল্পীর জীবনে নেমে এসেছিল এমনই অভিশাপ। যদি একটি হাতও থাকত, সেই হাতে নতুন করে আঁকা শুরু করার স্বপ্ন দেখতে পারতেন ওই চিত্রশিল্পী। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে, দুটি হাতই কনুইয়ের নীচ থেকে কাটা পড়েছিল ওই হতভাগ্য শিল্পীর। অন্ধকার নেমে এসেছিল তাঁর জীবনে। কিন্তু, আবার তাঁর জীবনে পড়ছে সূর্যের আলো। ফের তুলি উঠতে চলেছে তাঁর হাতে। আর এই মিরাকল সম্ভব হয়েছে, দিল্লির একদল চিকিৎসকের দক্ষতা এবং এক মহিলার অঙ্গদানের অঙ্গীকারের জন্য। ওই মহিলার জন্য শুধু এই চিত্রশিল্পীই নন, বদলে গিয়েছে আরও চারটি জীবন।
ওই চিত্রশিল্পীর বয়স এখন ৪৫ বছর। ২০২০ সালে আচমকা তাঁর জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছিল। এক ট্রেন দুর্ঘটনায় তাঁর দুটি হাতই কাটা পড়েছিল। একেবারে সাধারণ পরিবার থেকে আশা ওই শিল্পী ধরেই নিয়েছিলেন, তাঁর জীবনের এখানেই ইতি। অবসাদ গ্রাস করেছিল তাঁকে। কিন্তু, সম্প্রতি তাঁর জীবনে দেবদূতের মতো উপস্থিত হয়েছিলেন মীনা মেহতা। দক্ষিণ দিল্লির এক অভিজাত স্কুলের প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন মীনা। সম্প্রতি তাঁকে ব্রেনডেড হিসেবে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তার আগেই অবশ্য অঙ্গদানের অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন এই মহিলা। তাঁর দুটি হাতই ওই চিত্রশিল্পীকে ফের হাতে তুলি তোলার স্বাধীনতা দিয়েছে। চিত্রশিল্পীকে হাত দেওয়ার পাশাপাশি, অপর তিনজনের জীবন তিনি বদলে দিয়েছেন তাঁর কিডনি, লিভার এবং কর্নিয়া দিয়ে।
আলাদা করে বলতেই হবে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক দলের চিকিৎসকদের কথা। তাঁদের কঠোর পরিশ্রম এবং দক্ষতা ছাড়া এই মিরাকল সম্ভবই হত না। ১২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার করেছিলেন তাঁরা। দাতা, মীনা মেহতার হাতের প্রতিটি ধমনী, পেশী, কলা এবং স্নায়ুর সঙ্গে, ওই চিত্রশিল্পীর হাতের প্রতিটি ধমনী, পেশী, কলা এবং স্নায়ুকে সংযুক্ত করেন তাঁরা। তাঁদের এই পরিশ্রম ও নিষ্ঠা বৃথা যায়নি। অস্ত্রোপচারের শেষে, দুই হাতের বুড়ো আঙুল তুলে ডাবল থাম্বস-আপ দেখান চিত্রশিল্পী। এই এক ভঙ্গীতে একদিকে যেমন চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চিত্রশিল্পী, একই সঙ্গে তাঁদের প্রচেষ্টা যে সফল, তাও বুঝে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। প্রসঙ্গত, এই প্রথম দিল্লিতে একসঙ্গে দুই হাতের প্রথম সফল প্রতিস্থাপন হল। আগামীকাল ওই চিত্রশিল্পীকে হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।