শ্রীনগর: তালিবান সরকার গঠন নিয়ে এ বার মুখ খুললেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি (Mehbooba Mufti)। বুধবার তিনি বলেন, “তালিবানের উচিত আসল শরিয়া আইন অনুসরণ করা, যেখানে নারী-পুরুষ সকলেরই অধিকার সুনিশ্চিত হবে।”
গত ১ মে থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক প্রদেশ দখল নিতে শুরু করেছিল তালিব বাহিনী (Taliban)। গোটা আফগানিস্তান(Afghanistan)-ই নিজেদের মুঠোয় আনতেও বেশি সময় লাগেনি। গত ১৫ অগস্টই রাজধানী কাবুল (Kabul) দখল করে তালিবান। ঘোষণা করা হয় নতুন সরকার গঠন করা হবে শরিয়া আইন মেনে। দীর্ঘ সময় ধরে টালবাহানার পর চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবারই নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা করে তালিবান। মন্ত্রিসভার ৩৩ সদস্যের নামও ঘোষণা করা হয়।
নয়া তালিব সরকার ঘোষণার পরই ক্ষমতার শীর্ষে থাকা হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা জানান, সরকার গঠন ও সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শরিয়া আইনকে প্রাধান্য দিয়েই নেওয়া হবে। তবে প্রাচীন শরিয়া আইন নাকি আধুনিক শরিয়া আইন, যা বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলিতে অনুসরণ করে চলা হয়, তা গ্রহণ করবে তালিবান এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি।
আফগানিস্তানে তালিবানের সরকার গঠন ও শরিয়া আইন চালু করার ঘোষণা প্রসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট মেহবুবা মুফতি বলেন, “তালিবানের হাতে দেশশাসনের ঘটনাটি সত্য়ি হয়ে উঠেছে। আগের তালিব সরকারের ভাবমূর্তি ছিল মানবাধিকার-বিরোধী। যদি ওরা আফগানিস্তান শাসন করতে চায়, তবে কোরানে উল্লেখ আসল শরিয়া আইন অনুসরণ করতে হবে যেখানে নারী, শিশু ও বয়স্কদের অধিকার সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।”
যদি মদিনার শাসক মহম্মদ যেভাবে দেশ শাসন করতেন, তার উদাহরণ অনুসরণ করেব চলে তালিবান, তবে গোটা বিশ্বের তা নজির গড়বে, এমনটাই জানান জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, “যদি আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে বাণিজ্য করতে বা নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় তালিবান, তবে তাদের ইসলাম ও শরিয়া আইনের কট্টরপন্থী দিকগুলি না তুলে দরাই ভাল। যদি তা অনুসরণ না করা হয়, তবে আফগানবাসীদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।”
তালিবানরা আফগানিস্তান দখলের পর থেকেই চর্চায় বারবার উঠে এসেছে শরিয়া আইন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি আফগানিস্তানের শাসনভার যখন তালিবানের হাতে ছিল, সেই সময়ও শরিয়া আইন অনুসরণ করা হত। শরিয়া আইনে মহিলাদের শিক্ষার অধিকার প্রসঙ্গে কোনও উল্লেখ না থাকায়, মেয়েদের স্কুল-কলেজ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এছাড়াও বাড়ি থেকে একা বেরনো, উচ্চস্বরে কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। মহিলাদের সর্বক্ষণ বুরখা বা হিজাব পড়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই তালিবান জানিয়েছিল, তারা বদলে গিয়েছে। এ বার মহিলাদের অধিকারস সুনিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা ও চাকরির অধিকার দেওয়া হবে শরিয়া আইন মেনেই। ইতিমধ্যেই মহিলাদের উচ্চশিক্ষাৈর ক্ষেত্রে একাধিক শর্ত ও খেলাধুলোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামিদিনে আর কী কী নতুন নিয়ম চালু করে তালিবান, তাই-ই এখন দেখার।
আরও পড়ুন: ‘জীবনের সবথেকে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল’, বিপদের মুখে দেশবাসীকে ছেড়ে পালানোর সাফাই দিলেন ঘানি