নয়া দিল্লি: চলতি মাসের শুরুতেই সুখবর দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা জানিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারিকে আর বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা বল যাবে না। কোভিডের বিপদ প্রশমিত হলেও, অন্যান্য ভাইরাসের বিপদ কাটেনি। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে ভারতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গি। ন্যাশনাল ভেক্টর ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে গোটা ভারতে ১,১০,৪৭৩ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই অবস্থায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যআল রিসার্চ বা আইসিএমআর-এর (ICMR) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডেঙ্গির টিকা (Dengue Vaccine) বা ভ্যাকসিন তৈরি করছে প্যানাসিয়া বায়োটেক (Panacea Biotech)। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তারা জানিয়েছে, কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের তৈরি ডেঙ্গি ভ্যাকসিনের ফেজ-৩ ট্রায়াল শুরু করা হবে।
প্যানাসিয়া বায়োটেক আরও জানিয়েছে, ফেজ-৩ ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের কাউকে কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বাকিদের প্ল্যাসিবো দেওয়া হবে। অংশগ্রহণকারী বা তদন্তকারীরা কেউই জানতে পারবেন না যে কে ভ্যাকসিন গ্রহণ করছে, আর কে নিচ্ছে প্ল্যাসিবো। এই ট্রায়ালের প্রাথমিক লক্ষ্য হল, ডেঙ্গি জ্বর প্রতিরোধে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা। ট্রায়ালের দ্বিতীয় লক্ষ্য হল ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা পরীক্ষা করা। আইসিএমআর-এর সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ডা. নিবেদিতা গুপ্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্যানাসিয়া বায়োটেক ভারতের সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের উপর ভ্যাকসিনটির ফেজ-১ এবং ফেজ-২-এর ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেছেন, “আমাদের কিছু প্রাথমিক ইমিউনোজেনিসিটির ফলাফলও পেয়েছি। তাই সমস্ত পেপারওয়ার্ক সম্পন্ন হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ডিসিজিআই থেকে ফেজ-৩-এর ব়়্যান্ডম ডাবল-ব্লাইন্ড, প্ল্যাসিবো নিয়ন্ত্রিত ট্রায়ালের অনুমোদনও দিয়েছে। ২০ টি স্থানে ১৮ থেকে ৮০ বছর বয়সী ১০,৩৩৫ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে।”
আইসিএমআরের ডিরেক্টর জেনারেল ডাঃ রাজীব বহল জানিয়েছেন, ডেঙ্গি ভ্যাকসিনটির ফেজ-৩ ট্রায়াল প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে, মূল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। কারণ, প্যানাসিয়া বায়োটেক সংস্থার পক্ষ থেকে ভ্যাকসিনটি এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আগামী অগস্ট মাসের মধ্যে সেই ব্যাকসিনটি এবং অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তাই, অগস্ট মাস থেকেই এই ভ্যাকসিনের ফেজ-৩ ট্রায়াল শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডেঙ্গি হল একটি মশাবাহিত রোগ। চারটি ভিন্ন ভিন্ন ভাইরাস এই রোগ সৃষ্টি করে। ভারতের অনেক অংশেই ডেঙ্গি এখন একটি অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্যগত সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে হেমোরেজিক জ্বর-সহ হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা থেকে শুরু করে গুরুতর অসুস্থতা হতে পারে। বহু মানুষের মৃত্যুরও কারণ হয় ডেঙ্গি। কাজেই এই ভ্যাকসিন ট্রায়াল সফল হওয়াটা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।