নয়া দিল্লি: প্রতিরক্ষা বিষয়ক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বিবেক রঘুবংশী এবং অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা কমান্ডার আশিস পাঠককে, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করল সিবিআই। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বা ডিআরডিও-র বিভিন্ন প্রকল্পের বিদ বিবরণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর অস্ত্র সংগ্রহের পরিকল্পনা-সহ বিভিন্ন সংবেদনশীল সামরিক তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তাদের মতে, এই তথ্যগুলি বাইরের দেশের হাতে পড়লে, ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, বুধবার (১৭ মে) অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে গ্রেফতার করা হল বিবেক রঘুবংশী এবং আশিস পাঠককে। এক সিবিআই কর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই বিবেক রঘুবংশীকে জেরা করা হয়। জেরায় জানা যায়, ওই প্রাক্তন নৌসেনা কমান্ডারের সঙ্গে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছিলেন বিবেক রঘুবংশী। পুরো ঘটবনার পিছনে একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ সিবিআই-এর। এই বিষয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরেই সিবিআই-এর পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, তথ্য ফাঁসের অভিযোগ করে একটি মামলা নথিভুক্ত করেছিল সিবিআই। সিবিআই-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিবেক রঘুবংশী ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্পর্কে সংবেদনশীল তথ্যাদি সংগ্রহ করতেন। তারমধ্যে ডিআরডিও-র বিভিন্ন প্রকল্প ও সেগুলির অগ্রগতি, সশস্ত্র বাহিনী আগামী দিনে কী কী অস্ত্র ও সামরিক সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে চলেছে সেই সবের বিবরণ, বাহিনীর কৌশলগত প্রস্তুতি, বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক আলোচনার সারাংশের মতো তথ্য ছিল। এই ধরনের তথ্য শুধু সংগ্রহ করা নয়, সিবিআই-এর দাবি অনুযায়ী সেগুলি বিভিন্ন বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সঙ্গে ভাগ করেও নিতেন বিবেক রঘুবংশী। তবে এই মামলায় অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা কমান্ডার আশিস পাঠকের কী ভূমিকা ছিল, তা জানায়নি সিবিআই।
সিবিআই-এর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এক মার্কিন নিউজ পোর্টালে নিয়মিত নিবন্ধ লিখতেন বিবেক রঘুবংশী। পোর্টালটি মূলতঃ প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ গবেষণার বিষয়ে খবর পরিবেশন করে। বিবেকও ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সম্পর্কেই খবর লিখতেন। এই পরিস্থিতিতে, এই মামলার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে লে মনে করছে সিবিআই। সিবিআই-এর এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলির কী কী তথ্য বিদেশী সংস্থাগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে, তা খুঁজে বের করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তদন্তের এই পর্যায়ে, এই ভাগ করা তথ্যগুলি খুঁজে বার করাতেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার, এই মামলার তদন্তের স্বার্থে নয়া দিল্লির ১২টি স্থানে অনুসন্ধান চালিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিবেক রঘুবংশীর কাছ থেকে সংবেদনশীল তথ্য সম্বলিত বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় রাজীব শর্মা নামে এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। তার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত ক্লাসিফায়েড নথি ছিল বলে অভিযোগ সিবিআই-এর। চিনা রাষ্ট্রায়ত্ব সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ নিযুক্ত ছিলেন ওই সাংবাদিক। তার আগে ২০১৫ সালেও সাইকিয়া নামে এক সাংবাদিককে সংবেদনশীল তথ্য ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।