ব্রাসেলস: রুশ অপরিশোধিত তেল থেকে ভারতীয় পরিশোধিত তেলজাত পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ নীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান জোসেফ বোরেল। রুশ কাঁচা তেল থেকে তৈরি ডিজেল-সহ পরিশোধিত জ্বালানী বিক্রির জন্য, ভারতের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। মস্কোর শক্তি ক্ষেত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার লক্ষ্যেই পশ্চিমী দেশগুলির এই পদক্ষেপ করা উচিত বলেছিলেন বোরেল। মঙ্গলবার (১৬ মে), ব্রাসেলসে তাঁকে কড়া জবাব দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিককে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের নিয়মকানুনে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। জয়শঙ্কর বলেছেন, “ইইউ কাউন্সিলের বিধানগুলি দেখুন। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, রুশ অপরিশোধিত তেল তৃতীয় কোনও দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হলে তাকে আর রুশ তেল হিসাবে বিবেচনা করা হবে না।”
তিন দেশ সফরের শেষ পর্যায়ে, গত সোমবার ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। এর আগে তিনি বাংলাদেশ এবং সুইডেন সফর করেন। বেলজিয়ামের রাজধানীতে এক বাণিজ্য প্রযুক্তি আলোচনায় যোগ দেন জয়শঙ্কর। তাঁর সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে যোগ দেন, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং কেন্দ্রীয় উদ্যোগ, দক্ষতা উন্নয়ন, ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জোসেফ বোরেলও। এই বৈঠকের আগেই এক সাক্ষাতকারে বোরেল বলেছিলেন, “ভারত রুশ তেল কেনে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তারা রুশ তেল থেকে তৈরি বিজেলের মতো পরিশোধিত জ্বালানি পণ্য ইউরোপে বিক্রি করবে, এটা ঠিক নয়। এর বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” বৈঠক পরবর্তী ,সাংবাদিক সম্মেলনেই এর জবাব দেন জয়শঙ্কর।
সেই সময় অবশ্য বোরেল উপস্থিত ছিলেন না। তার জায়গায়, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত কমিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, মার্গ্রেথ ভেস্টেগার সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন। জয়শঙ্করের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞার আইনগত ভিত্তি সম্পর্কে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে, ইউরোপিটান ইউনিয়ন এবং ভারত পরস্পর বন্ধু। বন্ধু হিসেবে এই নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। পরস্পরকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।”
এর আগে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি করা নিয়েও আপত্তি তুলেছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কমানোর জন্য নয়া দিল্লিকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেই সময়ও রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির সপক্ষে কঠোর যুক্তি দিয়েছিলেন বিদেশ মন্ত্রী। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, ইউরোপ তার নিজস্ব শক্তির চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অথচ, ভারতকে অন্য পথে হাঁটতে বলছে। ভারতের তুলনায় ইউরোপের দেশগুলির রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বেশি, তথ্য পেশ করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। তিনি জানিয়েছিলেন, দেশের স্বার্থেই রাশিয়ার থেকে সস্তায় তেল কিনছে ভারত সরকার।