নয়া দিল্লি: বিচারব্যবস্থার উপরে থাকা আস্থা-বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে ধর্ষকদের মুক্তি, বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত ১১ জনের মুক্তির খবর শুনে এমনটাই প্রতিক্রিয়া নির্যাতিতার। চলতি সপ্তাহেই গুজরাট সরকারের তরফে ২০০২ সালে গণধষর্ণকাণ্ডে অভিযুক্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। চোখের সামনে যারা তাঁকে ও তাঁর মা-বোনকে গণধর্ষণ করেছিল, তাদের মুক্তির খবর শুনে স্তম্ভিত বিলকিস বানো। তিনি বলেন, “এই রায় শোনার পর আমি স্তম্ভিত। কিছু বলার শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।”
বুধবার অভিযুক্তদের মুক্তির পর প্রথম প্রতিক্রিয়া দেন বিলকিস বানো। দীর্ঘ ১৮ বছর আদালতে লড়াইয়ের পরও অভিযুক্তদের মুক্তির খবর শুনে তিনি বলেন, “কীভাবে কোনও মহিলার উপরে হওয়া নির্যাতনের বিচার এভাবে শেষ হয়? আমি দেশের শীর্ষ আদালতের উপরে ভরসা করেছিলাম। বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা রেখেছিলাম। ধীরে ধীরে এই মানসিক ধাক্কার সঙ্গে আপোশ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা শুরু করেছিলাম। আমার দুঃখ ও বিচারব্যবস্থার উপর থেকে আস্থা কমে যাওয়া শুধু আমারই নয়, সেই প্রত্যেক মহিলার, যারা আদালতে নায্য বিচার পাওয়ার জন্য লড়ছেন।”
গুজরাট সরকারের নাম না করেও দুষে বিলকিস বলেন, “এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ আমার সুরক্ষা বা ভাল থাকার বিষয়ে খোঁজ করেননি। আমি অনুরোধ করছি, দয়া করে আমায় শান্তিতে, বিনা ভয়ে বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিন। দয়া করে আমার ও আমার পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।”
২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাটে ছড়িয়ে পড়ে হিংসা। দাঙ্গা চলাকালীন দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে ভয়ানক হামলা চলে। সেখানেই পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানো ও তাঁর মা-বোনকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের সামনেই তাঁর ৩ বছরের মেয়েকে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। ২১ বছর বয়সী বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর পরিবৈরের ৭ জনকে খুন করা হয়।
এরপরই শুরু হয় আইনি লড়াই। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই কোর্টে অভিযুক্ত ১১ জনকে গণধর্ষণ ও ৭ জনকে খুনের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৫ বছর জেলে থাকার পর সম্প্রতিই সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিলেন সাজাপ্রাপ্তদের একজন। শীর্ষ আদালতের তরফে বিষয়টি গুজরাট সরকারের বিবেচনার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আর তার পরেই সরকারের তরফে মুক্তি দেওয়া হয় ১১ জনকে। গুজরাট সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়েই তৈরি হয়েছে চরম বিতর্ক। সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরাও।