হায়দরাবাদ ও নয়া দিল্লি : সম্প্রতি জাতীয় রাজনীতিতে বহুল আলোচ্য বিষয় হল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) কি কংগ্রেসে (Congress) যোগ দিচ্ছেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর এখন সেইদিকেই। নজরে রয়েছে কংগ্রেসের সভানেত্রীর সঙ্গে পিকে-র আবার কোনও বৈঠক হল কিনা। এই আবহে পিকে-র তেলঙ্গানা সফর নিয়ে জল্পনা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। পিকে-র কংগ্রেসে যোগদান ঘিরে এমনিতেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। সেই উত্তেজনা এবার নাটকীয় মোড় নিল। যদি প্রশান্ত কিশোর আজ বাদে কাল কংগ্রেসেই যোগ দেন তাহলে কংগ্রেসের বিরোধী দল তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (TRS)-র প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে দেখা করলেন কেন হঠাৎ! তাহলে কি ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন কোনও সমীকরণ তৈরি হতে চলেছে? কংগ্রেসে যোগদানের মুখে পিকে-কেসি রাও সাক্ষাৎ ঘিরে এরকম বহু প্রশ্ন উঠে এসেছে রাজনৈতিক মহলে।
পিকে-কেসিআর সাক্ষাৎ
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পিকে কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন বলে সূত্র মারফত খবর মিলেছে। এর মধ্যে প্রশান্ত কিশোর শুধুমাত্র তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও এর সঙ্গে দেখাই করেননি তাঁর সরকারি বাসভবনে রাতও কাটিয়েছেন। শনিবার সকালেই হায়দরাবাদ পৌঁছোন পিকে। এবং সারারাত মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘প্রগতি ভবনে’ ছিলেন তিনি। আর রবিবার সেখানেই পিকে ও কেসি রাও-এর মধ্যে বৈঠক চলছে বলে সূত্রের খবর। ভোটকুশলী হিসেবে প্রশান্তের দক্ষতা এর আগেও দেখেছেন বিভিন্ন রাজ্য তথা দেশ। সেই সুনামের উপর ভরসা করেই পিকের সঙ্গে সম্ভবত চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেসিআর। সম্প্রতি একটি সাংবাদিক বৈঠক থেকে কেসিআর ঘোষণা করেছেন যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কেসিআর কে সাহায্য় করবে পিকে। এমনকি ২০২৪ সালেও ভোটকুশলীর প্ল্যান মাফিক লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
কংগ্রেস-কেসিআর সমীকরণ
কংগ্রেসে যোগদানের মুখে কেসিআর-র সঙ্গে পিকে-র সাক্ষাৎ নিয়ে হইচই কেন পড়ল রাজনৈতিক মহলে! তেলঙ্গানায় বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল টিআরএস। কংগ্রেস সেখানে প্রধান বিরোধী দল। অর্থাৎ দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে এই দক্ষিণী রাজ্যে। তেলঙ্গানা কংগ্রেস প্রধান রেভান্থ রেড্ডিকে কেসিআর ও তাঁর ছেলে কেটি রামা রাওয়ের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে। এই আবহে কংগ্রেস ও টিআরেএস এই দুই দলকে একসঙ্গে কীভাবে সামলাবে পিকে! কিছুদিনের মধ্যেই কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা পিকে-র। কংগ্রেস নেতা হয়ে তেলঙ্গানায় কংগ্রেস বিরোধী দলের হয়ে নির্বাচনী প্রেসক্রিপশন লিখবে পিকে ও তাঁর সংস্থা আইপ্যাক! যেটা একেবারেই অসম্ভব বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। নাকি পরিস্থিতি সামাল দিতে আইপ্যাক থেকে ‘মিছিমিছি’ দূরত্ব তৈরি করবেন পিকে! অর্থাৎ, তিনি থাকবেন কংগ্রেসের নেতা হয়ে। আইপ্যাক একটি ভিন্ন সংস্থা হয়ে পিকের নাম না করেই তেলঙ্গানার রাজনৈতিক সমীকরণ লিখবে তথাকথিত পিকে-র সংস্থা আইপ্যাক!
২৪ এর লক্ষ্যে নয়া জোট!
বেশ কয়েকবছর ধরে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে এই কংগ্রেস। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। নতুন করে কোনও রাজ্যে দাঁত ফোটাতে পারেনি উল্টে নিজেদের দখলে থাকা পঞ্জাব আসন হারিয়েছে এই প্রাচীন দল। তার অন্যতম কারণ হল কংগ্রেসের অন্দরের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। যদিও তা আলাদা প্রসঙ্গ। তবে ২৪ এর নির্বাচনকে লক্ষ্য করে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া কংগ্রেস। তাই ডাক পড়েছিল সফল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের। নির্বাচন জেতানোর রেকর্ড রয়েছে প্রশান্তের রেজাল্টে। সেইমতো ১৬ এপ্রিল কংগ্রেসের সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী ও অন্যান্য বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। সেখানে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে কংগ্রেসের কী কী করণীয় তা একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেন পিকে। শুধুমাত্র ভোটকুশলী নয় দলের অন্য়তম সৈনিক হিসেবে তাঁকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়। এদিকে সেই প্রস্তাবে সায় দিয়েই কংগ্রেসে কিছুদিনের মধ্যেই অভিষেক হওয়ার কথা পিকে-র।
এই আবহে কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বী দল টিআরএস-র সঙ্গে সাক্ষাতে জোটের একটি প্রসঙ্গও উঠে আসছে। ২৪ এর নির্বাচনে মোদীকে গদিচ্যুত করতে মরিয়া সব রাজনৈতিক দলগুলি। সেই তালিকাটা অনেকটাই লম্বা। সেখানে একটি নাম হল কেসিআর। নিজের রাজ্য়ের পাশাপাশি জাতীয় স্তরে অন্যতম বিরোধী মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা দেখা গিয়েছে কেসিআর-র মধ্যে। একাধিকবার মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সম্প্রতি দিল্লির রাজপথে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি কড়া ভাষায় মোদীকে গদিচ্যুত করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। তাঁকে বলতে শোনাও গিয়েছে, “বিজেপিকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিন।” ২৪ এর লক্ষ্যে বিরোধী শক্তিকে একজোট করতে তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন ও এনসিপি প্রেসিডেন্ট শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখাও করেন।
এর মধ্যে উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি অভাবনীয়ভাবে তেলঙ্গানায় নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল। কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে রাজ্যে ৪টি লোকসভা আসনে জিতেছিল বিজেপি। গত বছর হায়দরাবাদ পুরনির্বাচনেও ৪০-এর বেশি ওয়ার্ডে জয় পেয়ে কেসিআর-এর রাতের ঘুম কেড়েছিল বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে আগামিদিনে তেলঙ্গানায় বিজেপি হয়ে উঠতে পারে প্রধান বিরোধী মুখ। যেমনটা এককালে হয়েছিল এই বাংলাতেও। সেই সমীকরণ মাথায় রেখেই কেসিআর ও কংগ্রেসকে একই আসনে বসাতে চাইছেন পিকে? মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্যের দ্বন্দ্ব ভুলে পিকে-র ‘নেতৃত্বে’ কেন্দ্রে হাতে হাত মেলাবে কি কংগ্রেস-টিআরএস! সূত্রের খবর, কংগ্রেসকে দেওয়া উপস্থাপনায় তেলঙ্গানায় কংগ্রেস ও কেসিআর এর মধ্যে জোট গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন পিকে। এইবার সেই লক্ষ্য
পূরণেই এই সাক্ষাৎ কিনা তা পরে জানা যাবে।
আরও পড়ুন : Car Thief: হাতে এমবিএ-র ডিগ্রি, পকেটে মাস্টার কি! ৬০টি গাড়ির ‘মালিক’কে ধরতে গিয়ে ‘ঘোল’ খেল পুলিশও