নয়া দিল্লি: একজন তখন দেশজুড়ে বিজেপির সংগঠন মজবুত করতে ব্যস্ত। অন্যজন মধ্য তিরিশের যুবক। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর প্রচার কৌশল নজর কাড়ল প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবাণীর। তাঁর জহুরির চোখ চিনে নিলেন ভবিষ্যতের কাণ্ডারীকে। এভাবেই লালকৃষ্ণ আদবাণীর ‘শিষ্য’ হয়ে উঠলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী (Narendra Modi)। একসময়ে যে রাম মন্দির আদবাণীর স্বপ্ন ছিল, আজ সেটা বাস্তবায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এবার মোদী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন পাচ্ছেন আদবাণী (L.K Advani)।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS)-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP)-এর গুজরাটের প্রচারক হিসাবে রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। তবে সঙ্ঘ প্রচারক থেকে সক্রিয় বিজেপি কর্মী হতে তাঁর খুব বেশি সময় লাগেনি। ১৯৮৭ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন মোদী। শুরু থেকেই নিজেকে দক্ষ সংগঠক হিসাবে প্রমাণ করেন তিনি। তারপর গুজরাট বিজয় করে বিজেপি তথা জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন মোদী। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাজকর্ম ‘লৌহপুরুষ’ আদবাণীর নজর এড়ায়নি। এরপর ২০০১ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। যদিও মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী করার বিষয়ে দলের অনেকেরই সমর্থন ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল গুজরাত বিজেপি থেকে দলের জাতীয় স্তরের নেতাদের মধ্যেও। সেখানে সকলের বাধা উপেক্ষা করে নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন করায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আদবাণী।
নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেই ২০০২ সালে বড় দাঙ্গার সম্মুখীন হয়েছিল গুজরাত। স্বাভাবিকভাবেই মোদীর রাজ্য পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীও রাজধর্ম পালনের বার্তা দেন। সেই সময়ও বটবৃক্ষ হয়ে মোদীর পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবাণী। তিনিই মোদীকে ইস্তফা না দেওয়ার পরামর্শ দেন। আডবাণীর পরামর্শ যে ভুল ছিল না, সেটা পরবর্তীতে প্রমাণ করে দেন নরেন্দ্র মোদী।
এরপর ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়েও দলের অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, সেই সময়ও শিষ্যের পাশে এসে দাঁড়ান ‘লৌহমানব’। তাঁর সেই সমর্থন যে ভুল ছিল না, সেটা ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয় দিয়েই প্রমাণ করে দেন নরেন্দ্র মোদী। পরবর্তীতে বিশ্বের দরবারে ভারতকে তুলে ধরা থেকে রাম মন্দির নির্মাণ প্রমাণ করে দেয় যে, আডবাণীর শিষ্যত্ব বাছাইয়ে কোনও ভুল ছিল না।
রাম আন্দোলনের পুরোধা আডবাণী, যশবন্ত সিনহা, মুরলী মনোহর যোশীদের সরকারের প্রত্যক্ষভাবে না রেখে ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’-এ পাঠানো নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। সম্প্রতি গুরু-শিষ্যের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে বলেও রাজনীতির অন্দরে গুঞ্জন শোনা যায়। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ যে সত্য নয়, তা সম্প্রতি প্রবীণ নেতার জন্মদিনে তাঁর বাড়িতে গিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে স্পষ্ট করে দেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। আর শিষ্য যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেইসময় ভারতরত্ন সম্মান পেয়ে আপ্লুত গুরু আদবাণী।