PM Narendra Modi: ‘সংসার চালাতে দু-একটা বাড়িতে বাসনও মেজেছেন…’, মায়ের শতবর্ষে জীবনযুদ্ধের কাহিনি শোনালেন প্রধানমন্ত্রী

PM Modi's Blog on Hiraben Modi: প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর মা কঠোর নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতেন। তাঁর বাবা যে সময়ে ঘুম থেকে উঠতেন, সেই সময়েই  ঘুম থেকে উঠে সকালের মধ্যেই সংসারের সব কাজ সেরে ফেলতেন হীরাবেন।

PM Narendra Modi: 'সংসার চালাতে দু-একটা বাড়িতে বাসনও মেজেছেন...',  মায়ের শতবর্ষে জীবনযুদ্ধের কাহিনি শোনালেন প্রধানমন্ত্রী
মায়ের সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 18, 2022 | 12:27 PM

নয়া দিল্লি: মা, এই একটা শব্দ যে জীবনে কতটা অর্থবহ, তা আমরা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই বুঝতে পারি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও তাঁর মা, হীরাবেন মোদী ঠিক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ। আজ, ১৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর মায়ের জন্মদিন। শতবর্ষে পা দিচ্ছেন তিনি। মায়ের এই জন্মদিনটিকে বিশেষ করে তুলতেই গুজরাটে নিজের বাড়িতে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সকালেই দেখা যায় যে, হীরাবেন মোদীর সঙ্গে বসে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে মায়ের পা ধুইয়ে দিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন এবং মিষ্টিমুখও করান তিনি। ঠিক যেমন ছোট্ট একটি শিশু মায়ের স্নেহের পরশ পেয়ে খুশি হয়ে ওঠে, আজ সেই রূপেই দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।

মায়ের ১০০ বছরের জন্মদিনকে স্মরণীয় করে তুলতেই একটি ব্লগ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি লিখেছেন, “মা শব্দটা অভিধানের আর পাঁচটা শব্দের মতো নয়। এর সঙ্গে প্রচুর আবেগ জড়িয়ে রয়েছে- ভালবাসা, ধৈর্য, বিশ্বাস ও আরও অনেক কিছু। বিশ্ব, দেশ বা অঞ্চলের সীমানা মানে না। সব সন্তানরাই মায়ের সঙ্গে স্নেহের সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে। মা শুধু সন্তানের জন্মই দেন না, তাদের মন, ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাসও তৈরি করতে সাহায্য করে। এই কাজ করতে গিয়েই মায়েরা নিজেদের সমস্ত চাহিদা এবং স্বপ্নকে বিসর্জন দেন।”

তিনি আরও বলেন, “আজ আমি খুব খুশি এবং নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি যে, আমার মা হীরাবেন তাঁর শতবর্ষে পা দিচ্ছেন। আমার বাবা যদি বেঁচে থাকতেন, তাঁরও শতবর্ষ পূর্ণ হত গত সপ্তাহে। ২০২২ সাল আমার কাছে বিশেষ একটি বছর।”

মায়ের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত সপ্তাহেই গান্ধীনগর থেকে আমার ভাইপো মায়ের কয়েকটি ভিডিয়ো পাঠিয়েছিল। ওই ভিডিয়োয় দেখতে পাই যে, আশপাশের কিছু তরুণ আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমার বাবার ছবি চেয়ারের ওপর রাখা হয়েছিল আর কীর্তন হচ্ছিল। আমার মা ভজন গাইছিলেন, মঞ্জিরা বাজাচ্ছিলেন। মা এখনও ঠিক একইরকম আছেন। বয়সের ভারে শরীর একটু অশক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানসিকভাবে মা সম্পূর্ণ সুস্থ-সবল ও শক্তিশালী।”

মাকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

জন্মদিন পালনের রীতি-

নমো জানান, আগে আমাদের পরিবারে জন্মদিন পালনের কোনও রীতি ছিল না। তবে এবার বাবাকে স্মরণ করে পরিবারের তরফে ১০০টি চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে।

সাধারণ জীবন-যাপনই অসামান্য করে তুলেছে হীরাবেনকে-

মায়ের সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে প্রায়সময়ই আবেগঘন হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। মা হীরাবেন মোদীর জন্মদিনেও স্মৃতিচারণ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, আমার জীবনে যা কিছু ভাল, তা সবই আমার মা-বাবার থেকে পাওয়া। দিল্লিতে বসেও আজ আমার অতীতের স্মৃতি মনে পড়ছে। আমার মা খুবই সরল, আবার অনন্যও। বাকি সকলের মায়ের মতোই আমার মা। এই যে আমি আমার মায়ের সম্পর্কে লিখছি, আমি নিশ্চিত যে আপনারা অনেকেই নিজের মায়ের সঙ্গে মিল পাবেন। পড়তে গিয়ে হয়তো আপনার মায়ের ছবিও মনে আসবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মায়ের নিঃস্বার্থতাই ভাল মানুষ তৈরি করে। তাঁর স্নেহ, সন্তানের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ ও সমমর্মিতা তৈরি করে। মা শুধু একজন মানুষই নন, মাতৃত্ব একটি গুণ। আমরা প্রায়ই বলি ভগবান তাঁর ভক্তদের চরিত্রানুযায়ী গঠিত। একইভাবে আমাদের নিজেদের মানসিকতা এবং স্বভাবের প্রতিফলন আমরা দেখি মায়ের মধ্যেই।”

কেমন ছিল হীরাবেনের শৈশব?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার মায়ের জন্ম গুজরাটের মেহসানা জেলার ভিসনগরে। আমার মা কিন্তু তাঁর মায়ের স্নেহ পাননি। খুব অল্প বয়সেই স্প্যানিশ ফ্লু-তে আমার দিদিমা মারা যান। মায়ের এমনকি দিদিমার মুখ বা কোলের কথা মনেও নেই। মায়ের ছোটবেলা কেটেছে মাতৃহীন হয়ে। মা কোনওদিন তাঁর মায়ের কাছে বায়না করতে পারেননি, তাঁর কোলে মাথা দিয়ে শুতে পারেননি। মা স্কুলেও যাননি, তিনি লিখতে-পড়তেও জানেন না। মায়ের শৈশবে ছিল শুধুই দারিদ্র আর বঞ্চনা।”

তিনি আরও বলেন, “আজকের সময়ের তুলনায় মায়ের শৈশব ছিল খুবই কঠিন। হয়তো ঈশ্বর এটাই তাঁর ভাগ্যে লিখেছিলেন। মা-ও এটিকে ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে মনে করেন। কিন্তু এই যে শৈশবে নিজের মাকে হারানো বা নিজের মায়ের মুখটাও না দেখতে পাওয়া- এটা মাকে কষ্ট দেয়। এই সব সংগ্রামের কারণে মায়ের শৈশব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বয়সের আগেই মাকে বড় হয়ে উঠতে হয়েছিল। মা-ই ছিলেন পরিবারের বড় মেয়ে আর বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে বড় বউ। শৈশবে মা, তাঁর গোটা পরিবারের দেখভাল করতেন এবং সংসারের সব কাজ করতেন। বিয়ের পরেও মা এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। অজস্র দায়িত্ব এবং প্রতিদিনের সংগ্রাম সত্ত্বেও মা গোটা পরিবারটিকে ধৈর্য এবং শক্তি দিয়ে একসূত্রে বেঁধে রেখেছিলেন।”

মায়ের পা ধুইয়ে দিলেন নমো।

কেমন ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছোটবেলা?

ভাদনগরে আমাদের পরিবার একটা ছোট্ট জানালাহীন বাড়িতে থাকত। শৌচাগারও ছিল না। মাটির দেওয়াল ও টালির ছাদের এই ছোট্ট ঘরটিকেই আমরা নিজেদের বাড়ি বলতাম। আমি, আমার ভাই-বোনেরা, বাবা-মা সকলে মিলে ওই বাড়িতে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাঁশ ও কাঠের পাটাতন দিয়ে বাবা একটি মাচা বানিয়েছিলেন যাতে মায়ের রান্না করতে সুবিধা হয়। ওটাই ছিল আমাদের রান্নাঘর। মা মাচার উপর উঠে রান্না করতেন, আমরা ওখানেই বসে খেতাম। আমার বাবা-মা দৈনিক সংগ্রামের উদ্বেগকে পরিবারের শান্তি বিঘ্নিত করতে দেননি। বাবা-মা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছিলেন, তা পালনও করতেন।”

মায়ের কঠোর নিয়মাবর্তিতা-

প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর মা কঠোর নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতেন। তাঁর বাবা যে সময়ে ঘুম থেকে উঠতেন, সেই সময়েই  ঘুম থেকে উঠে সকালের মধ্যেই সংসারের সব কাজ সেরে ফেলতেন হীরাবেন। শস্য পেষা থেকে শুরু করে চাল-ডাল ঝাড়াই, যাবতীয় কাজ একা হাতেই করতেন। কাজ করতে করতে গুনগুন করে ভজন গাইতেন তাঁর মা।

প্রধানমন্ত্রীর অজানা শৈশব, তাঁর মায়ের সম্পর্কে নানা কাহিনি জানতে, প্রধানমন্ত্রীর লেখা ব্লগটি বিস্তারিত পড়ুন- https://www.narendramodi.in/be/mother-562570