Sunil Kanugolu: ফের নিজের পায়েই কুড়ুল কংগ্রেসের, লোকসভার প্রচারে নেই ‘ম্যাজিক ম্যান’ কানুগোলু

Jan 12, 2024 | 3:19 PM

Sunil Kanugolu: হিমাচল প্রদেশ, কর্নাটক, তেলঙ্গানা - তিন রাজ্যেই কংগ্রেসের জয়ের কৃতিত্ব অনেকাংশে ছিল ভোট কুশলী সুনীল কানুগোলুর। সেই ম্যাজিক ম্যানই থাকছেন না ২০২৪ সালের মহা গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে। কেন তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ ভোটে ব্যবহার করছে না কংগ্রেস?

Sunil Kanugolu: ফের নিজের পায়েই কুড়ুল কংগ্রেসের, লোকসভার প্রচারে নেই ‘ম্যাজিক ম্যান’ কানুগোলু
তিন রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের নায়কই নেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে
Image Credit source: Twitter

Follow Us

নয়া দিল্লি: ফের একবার নিজের পায়ে কুড়ুল মারল কংগ্রেস? রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্নটাই ঘুরছে। একের পর এক রাজ্যে হারতে হারতে কংগ্রেসের মনোবল যখন প্রায় তলানিতে ঠেকেছিল, সেই সময়ই ২০২৩ সালে আচমকরা বিরাট জয় এসেছিল কর্নাটকে। তারপর, হয়েছে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। সেখানেও চমকে দেওয়া জয় এসেছিল তেলঙ্গানায়। আর এই দুই রাজ্যে জয়ের কৃতিত্বই অনেকাংশে ছিল ভোট কুশলী সুনীল কানুগোলুর। একসময় আরেক প্রখ্যাত ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সুনীল। পরে অবশ্য ‘আইপ্যাক’ থেকে সরে এসেছিলেন তিনি। কর্নাটক এবং তেলেঙ্গানা জয়েয় সেই ম্যাজিক ম্যানই থাকছেন না ২০২৪ সালের মহা গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে।

এর আগে তাঁকে অবশ্য কংগ্রেসের ‘টাস্ক ফোর্স ২০২৪’-এর অংশ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন, কংগ্রেসের এক সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কৌশল তিনি ঠিক করবেন না। বরং তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের। তিনি এখন এই দুই রাজ্যে দলের প্রচার প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করবেন। দুই রাজ্যে ইতিমধ্যেই কানুগোলুর দল রয়েছে। চলতি বছরেই হবে দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোট। সুনীল কানুগোলুর ঘনিষ্ঠ এক সূত্র আরও জানিয়েছে, এই দুই রাজ্যে প্রচার কৌশল ঠিক করার পাশাপাশি তিনি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির সরকারগুলিকে সহায়তা করবেন। কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার উপদেষ্টা পদে আছেন তিনি। তেলঙ্গানার কংগ্রেস সরকারকেও একইভাবে সাহায্য করবেন তিনি।

কংগ্রেসের দাবি, তারা দীর্ঘমেয়াদী ভাবনা থেকেই কানুগোলুকে লোকসভা নিকর্বাচনের প্রচারে রাখতে চাইছে না। তারা বলছে, কর্নাটক, তেলঙ্গানা এবং হিমাচল প্রদেশে জয়ের পাশাপাশি, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ় এবং পঞ্জাবে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তারা। এই চারটি রাজ্যের মধ্যে তিনটিতে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। আর, মদ্য প্রদেশে তাদের ক্ষমতা দখল ছিল সময়ের অপেক্ষা। বিজেপিতে অন্তর্কলহ ছিল, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা ছিল। তা সত্ত্বেও জিততে পারেনি। ফলে, বিজেপি যেখানে দেশের ১২টি রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, সেখানে কংগ্রেসের হাতে রয়েছে মাত্র তিনটি রাজ্য। তাই, ২০২৪-এ যে রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন হবে, সেগুলিতে দলের শক্তি বাড়ানোর জন্য কানুগোলুকে নামাচ্ছে কংগ্রেস। বিশেষ করে হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে বড় সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে শতাব্দী প্রাচীন দল। এছাড়া, অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশেও সুনীল কানুগোলুকে বৈতরণী পাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

তবে, তার আগে এপ্রিল-মে মাসে রয়েছে মহা গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচন। মোদী সরকার তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতে আশাবাদী। আর বিজেপির এই জয়যাত্রা আটকাত বিভিন্ন সর্বভারতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস। এই নির্বাচনে দলের মূল ভোট কুশলীকেই না রাখাটা কংগ্রেসের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কংগ্রেস দলের অন্দরের মনোভাব অবশ্য, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সুনীল কানুগোলুর না থাকাটা ‘সামান্য ধাক্কা’। সেই তুলনায়, বিজেপির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলি ছিনিয়ে নেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদী লাভ পাওয়া যাবে।

কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কানুগোলুর থাকা না থাকাটা? গত কয়েক বছরে তিন রাজ্যে কংগ্রেসের ভোট কুশলী হিসেবে কাজ করেছেন কানুগোলু এবং তাঁর দল। কর্নাটক, তেলঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশ – তিন রাজ্যেই জিতেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে, গত বছর মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ের নির্বাচনেও দলকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন তিনি। দুই রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও করেছিলেন। কিন্তু কমল নাথ, দিগ্বিজয় সিং বা অশোক গেহলটের মতো প্রবীন নেতারা তাঁকে পাত্তা দেননি। নিজেদের বস্তাপচা ভোট কৌশলের উপরই ভরসা রেখেছিলেন। কানুগোলু বলেছিলেন বেশ কিছু বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের। তাদের বদলে দিলেই জয় পেতে পারে কংগ্রেস। গোঁ ধরে বসে থেকেছেন গেহলট। মধ্য প্রদেশে কানুগোলুর সমীক্ষা বলেছিল কংগ্রেস জিততে পারবে না। বিজেপিকে হারাতে গেলে, প্রতিষ্ঠান বিরোধী ক্ষোভকে নিজেদের পক্ষে আনত হবে। বসে বসে জেতা যাবে না। কমল নাথ, দিগ্বিজয়রা হেসেছিলেন। দুই রাজ্যেই ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন ভুপেশ বাঘেল।

লোকসভা নির্বাচনী প্রচারের অঙ্ক আরও জটিল। বিশেষ করে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া গঠন করার পর, ভোট ভাগাভাগি নিয়ে বিভিন্ন শরিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করার আছে। কানুগোলুর মাথায় অনন্য সব ধারণা ঘোরে বলে শোনা যায়। ‘বিগ পিকচার’ দেখতে পান তিনি। কাজেই এই ধরনের আলাপ আলোচনা এবং নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে সুনীল কানুগোলু, কংগ্রেসের মূল্যবান সম্পদ হতে পারতেনবলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বচনে তিনি বিজেপির প্রচার কৌশলের অংশ ছিলেন। কাজেই, বিজেপির পদক্ষেপ সম্পর্কে অনেক অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা তা বুঝলে তো…

Next Article