নয়াদিল্লি: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির প্রদর্শনী নিয়ে দেশ জুড়েই ছড়িয়েছিল বিতর্ক। এই ছবি মুক্তির দিন কয়েক পরই রাজ্যে ছবির প্রদর্শনী নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কানির অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরই বিষয়টি নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ছবি নির্মাতারা। তা নিয়ে বুধ এবং বৃহস্পতিবার শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। সেই শুনানির পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে অসহিষ্ণু বলে ভর্ৎসনাও করেছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এই স্থগিতাদেশের জেরে আদালতে মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের।
বাঙালি পরিচালক নির্মিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ছবি নির্মাতাদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন সিনিয়র আইনজীবী হরিশ সালভে। সিবিএফসি-র বৈধ ছাড়পত্র থাকা সত্ত্বেও কেন এই ছবির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হল সে প্রশ্ন তোলেন সালভে। পাশাপাশি ‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমার প্রসঙ্গও উত্থাপিত করেছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে সওয়াল করেছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিতে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ তোলনে। টিজারের তথ্য সংশোধনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাসের কথা চিন্তা করে সিনেমা হলে প্রদর্শনীর জেরে যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয়, সে জন্যই নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল বলে দাবি করেন। এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা রিপোর্টের বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলেন সিঙ্ঘভি। তবে বাড়িতে বসে মোবাইলে এই ছবি দেখা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি নেই বলেও সুপ্রিম কোর্টে জানান তিনি। এ নিয়ে সিঙ্ঘভি আদালতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে সওয়ালের সময় বলেছেন, “দ্য কেরালা স্টোরি মোবাইলে দেখুন, ওটিটিতে দেখুন। আমাদের আপত্তি নেই। খোলা প্রেক্ষাগৃহে সিনেমার প্রদর্শন হলে আইনশৃঙ্খলা সমস্যা হতে পারে।”
যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই আবেদন যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়নি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের। এর পরই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে জানিয়েছেন, রাজ্যের হলফনামায় প্রদর্শন বন্ধ করার মতো যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য কারণ নেই। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা যাতে না হয় তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। সিনেমা হলগুলিতে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্যও এ দিন রাজ্যকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। সাংবিধানিক অধিকারে কী ভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দেশের শীর্ষ আদালত। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সিনেমা দেখে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে জুলাইয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে।