চণ্ডীগঢ়: ভোট বড় বালাই। আর তাই ভোটমুখী পঞ্জাবে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না কংগ্রেস সরকার। পঞ্জাববাসীর মন জিততে এবার এবার কেন্দ্রের দেখানো পথেই হাঁটল চরণজিৎ সিং চন্নির সরকার। পেট্রোলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে পঞ্জাব সরকার। কেন্দ্র পেট্রোপণ্যের উপর শুল্ক কমানোর পর এবার পঞ্জাব সরকারও পেট্রোলের উপর লিটার পিছু ১০ টাকা এবং ডিজেলের উপর লিটার পিছু ৫ টাকা দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কয়েক মাস পরেই পঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে পেট্রোপণ্যের উপর ভ্যাট কমানোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে কোনও সুযোগই নষ্ট করছে না পঞ্জাবের সরকার। জানান, বিগত ৭০ বছরের ইতিহাসে এমনটা কোনওদিন হয়নি পঞ্জাবে।
দীপাবলির আগের দিনই পেট্রোপণ্যের উপর থেকে কেন্দ্রীয় কর কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পেট্রোলে লিটার পিছু ৫ টাকা এবং ডিজেলে লিটার পিছু ১০ টাকা করে শুল্ক কমানোর কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রের দেখাদেখি অসম, ত্রিপুরা, গোয়া, কর্নাটক সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এবং ওড়িশার মতো বিজেপির কিছু ‘বন্ধু’ রাজ্য ভ্যাট কমানোর পথে হেঁটেছিল। কিন্তু এরপরেও পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গের মতো কিছু রাজ্য ভ্যাট না কমানোয় কেন্দ্রের থেকে তির্যক মন্তব্যও শুনতে হয়েছিল। আর এরই মধ্যে এক লাফে পেট্রোলের উপর ১০ টাকা ভ্যাট কমিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা ফায়দা তোলার চেষ্টায় কংগ্রেস।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্জাবের উপর নজর দিয়েছে দিল্লির আম আদমি পার্টিও। কিছুদিন আগেই পঞ্জাবে এক জনসভা থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করে গিয়েছিলেন, আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেবে আম আদমি পার্টির সরকার। আর তারপরই তড়িঘড়ি বিদ্যুতের মাশুল কমাতে বাধ্য হয়েছিল পঞ্জাব সরকার। আর এবার তাই কেজরিওয়ালের সরকারকেও নাম না করে কটাক্ষ করলেন চরণজিৎ সিং চন্নি। বলেন, “পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির মধ্যে এখন পেট্রোলের সবথেকে কম দাম পঞ্জাবেই। দিল্লির তুলনায় পঞ্জাবে এখন পেট্রোলের দাম লিটারপিছু ৯ টাকা কম।”
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পঞ্জাবে লিটারপিছু পেট্রলের দাম ৯৬ টাকা ১৬ পয়সা এবং ডিজেলের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা প্রতি লিটার। তবে চণ্ডীগঢ়ে তেলের দাম আরও কম। সেখানে পেট্রোলের দাম ৯৪ টাকা ২৩ পয়সা এবং ডিজেলের দাম ৮০ টাকা প্রতি লিটার। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং জম্মু ও কাশ্মীরে পেট্রোপণ্যের দাম এর থেকে অনেকটাই বেশি।
দিওয়ালির আগে রেকর্ড গতিতে দৌড়চ্ছিল জ্বালানির দাম। দেশের অন্তত ১২টি রাজ্যে ডিজেল অতিক্রম করে গিয়েছিল ১০০ টাকা। পেট্রল ১০০ টাকা পেরিয়েছিল দেশের সব রাজ্যের রাজধানীতেই। আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছিল ব্যারেল প্রতি জ্বালানির দাম। কেন দাম চড়ছে জ্বালানির? বিশেষজ্ঞদের মত দিয়েছিলেন, বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের চাহিদা বাড়ছে। তার জেরেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাগামহীন। প্রতিদিনই প্রায় ৩০-৩৫ পয়সা করে বাড়ছিল পেট্রোপণ্যের দাম।
যে হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছিল, তাতে রোজই চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ভারত বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল আমদানি করা দেশ। ভারতের তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশই আমদানি করা হয় মধ্য-পূর্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলি থেকে।