Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Rahul Gandhi:পরিণত হয়েছেন, ধরেছেন রাশ … ২০২৪-এ ‘উত্তরাধিকারী’ রাহুল গান্ধীর মধ্যে কি কোনও বদল এসেছে?

Rahul Gandhi: আজ যে কংগ্রেস জিতেছে, তা রাহুলের কংগ্রেস। রাহুলের লোকেরা এখন কংগ্রেসের সংগঠন সামলাচ্ছে। নতুন মুখের আবির্ভাব হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে তাদের। রাহুল তাঁর পুরনো খোলস থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

Rahul Gandhi:পরিণত হয়েছেন, ধরেছেন রাশ ... ২০২৪-এ 'উত্তরাধিকারী' রাহুল গান্ধীর মধ্যে কি কোনও বদল এসেছে?
রাহুল গান্ধীImage Credit source: GFX- TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 06, 2024 | 2:55 PM

পাণিনি আনন্দ, নয়া দিল্লি: রাহুল গান্ধী আর চশমা পরেন না। কিন্তু অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে তাঁর সেই প্রথম ছবি। ইন্দিরা গান্ধী শেষযাত্রার ছবিতে তাঁর মৃতদেহের পাশে চশমা পরে দাঁড়িয়ে ছিল সেই ছোট ছেলেটি। ফ্রেম বদলে গেলেও রাজীব গান্ধীর মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের চোখেও ছিল চশমা। রাহুল তখন চশমা দিয়ে পৃথিবী দেখতেন।

এরপর ৯০ দশকের শেষের দিকের ছবি। সেই রাহুল মায়ের জন্য ভোট চাইছেন। জনগণ তখন রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মধ্যে ভবিষ্যৎ ইন্দিরাকে দেখতে পাচ্ছে। রাহুলের মধ্যে তখনও যেন একটা দ্বিধা। সেখান থেকে বেরিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন রাহুল। ভাঙা ভাঙা হিন্দি, ভিড়ে অস্বস্তি চোখে পড়ছে তখনও। ২০০৪ সালে আমেঠি থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হন তিনি। এটাই ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে সহজ জমি। জিতে যান রাহুল। এই ধারা ২০১৪ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। আমেঠি থেকেই তিনবার সংসদে পৌঁছেছিলেন রাহুল।

এই সময় তাঁর পরিবার ও দল তাঁকে ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব দেয়। তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদকও করা হয়। রাহুল লিংডোহের সুপারিশগুলি ব্যবহার করে ছাত্র ইউনিটে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালান। সেগুলো ফলপ্রসূ হয়নি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁর কার্যকাল সম্পর্কে লোকেরা সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি মনে রেখেছে তা হল অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে ফেলেছিলেন।

নরসিমা রাও এবং সীতারাম কেশরি চলে যাওয়ার পর সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল দল। কিন্তু রাহুলের অস্বস্তি তখনও কাটেনি। ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু রাহুলকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। প্রশ্ন ওঠে রাহুলের যোগ্যতা নিয়ে। রাহুল রাজনীতি নিয়ে সিরিয়াস নন, এমনটাও শোনা যাচ্ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুলকে নানাভাবে ব্যঙ্গ এবং উপহাসের শিকার হতে হয়েছিল।

অন্যদিকে, রাহুল তাঁর নিজস্ব রাজনীতির জন্য দলের ভিতরে এবং বাইরে লড়াই করছিলেন। কংগ্রেসের তখন মাটিতে কাজ করার কোনও কর্মী ছিল না, অথচ কাঁধে ছিল কাঁধে হাজার হাজার মাথা। ২০১৪ সালে দল হেরে গেলে রাহুল নতুন কংগ্রেস গড়ার চেষ্টা শুরু করে। কিন্তু বারবার পরাজয়, মোদী-মডেল আরও চাপে ফেলেছিল রাহুলকে। অনেক নেতা দল ছেড়ে চলেও যান। রাহুলের বিরোধিতা তলে দলের অন্দরে।

এই সময়, রাহুল বিরোধীদের কাছে ‘পাপ্পু’ হয়ে উঠেছেন। ২০১৩ সালে দলের সহ-সভাপতি এবং ২০১৭ সালে কংগ্রেসের সভাপতি পদ পান রাহুল। ২০১৯-এর পরাজয়ের পর রাহুল পদত্যাগ করেন। হাতছাড়া হয় আমেঠি আসনও। দলের অন্দরে শোনা যায় বিদ্রোহের সুর। কপিল সিবাল, আনন্দ শর্মা, মনীশ তিওয়ারি, সন্দীপ দীক্ষিত, গুলাম নবী আজাদ, আরপিএন সিং, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, জিতিন প্রসাদ, ক্যাপ্টেন অমরিন্দর, বীরেন্দ্র সিং, অশ্বিনী কুমার, এসএম কৃষ্ণা, অশোক চাভনের মতো নেতারা, যারা হয় বিদ্রোহ করেছেন অথবা দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

ভারত জোড়ো যাত্রা রাহুলের রাজনৈতিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে ওঠে। এবার চশমা খুলে ফেলার পালা। চোখ থেকে নয়, দৃষ্টি থেকে। রাহুল নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করলেন দেশ, সমাজ ও মানুষকে। দেশ সম্পর্কে তাঁর ধারণা পাল্টাতে থাকে। দেশেরও তাঁর সম্পর্কে ধারণা বদলে যায়। প্রথমবারের মতো মানুষের মনে হয় রাহুল কিছু একটা করছেন। বেড়ে ওঠা দাড়ির পিছনে সততা চোখে পড়ে।

সামাজিক ন্যায়বিচার বড় মন্ত্র হয়ে ওঠে। নারী, অনগ্রসর শ্রেণী, দলিত, সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং দরিদ্রদের অধিকার ও স্বার্থের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন রাহুল। সংস্কারের কথা বলেন, দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য ম্যানিফেস্টো তৈরি করা হয়।

দেশের বড় সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে কংগ্রেস। রাহুলকে বুঝতে শুরু করে মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম ভোট যে রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের দিকে ফিরে আসছে তা বলা বাহুল্য।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর নতুন অবতারে সবার সামনে এসেছেন রাহুল। চশমা চলে গিয়েছে। দলের মধ্যে যারা বিদ্রোহী ছিল, তারা আত্মসমর্পণ করেছে অথবা নির্বাচনে হেরে শেষ সুযোগটি হারিয়েছে। এখন রাহুলের আদর্শই কংগ্রেসের আদর্শ। রাহুলের চিন্তাধারাই কংগ্রেসের পাথেয়।

আজ যে কংগ্রেস জিতেছে, তা রাহুলের কংগ্রেস। রাহুলের লোকেরা এখন কংগ্রেসের সংগঠন সামলাচ্ছে। নতুন মুখের আবির্ভাব হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে তাদের। রাহুল তাঁর পুরনো খোলস থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

১৫ বছরের মধ্যে এটাই বোধহয় প্রথম নির্বাচন যেখানে রাহুল এবং ‘পাপ্পু’ শব্দটি একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়নি। বিরোধীরাও বিরোধীরা বুঝতে পেরেছেন যে রাহুল আর পাপ্পু নন। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুলের কথা শুনছেন অনেকেই। এই নির্বাচনের আগে রাহুল যে ট্রোলিংয়ের মুখে পড়েছিলেন পুরনো সাক্ষাৎকারের জন্য। এবার কোনও সাক্ষাৎকারই দেননি রাহুল।

গত ১০ বছরে উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ভোট বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এসপি এবং বিএসপির মধ্ ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছিল। সেটা কংগ্রেসের দিকে যেতে শুরু করেছে। আজ কংগ্রেস কার্যত শক্তিশালী। এনডিএ স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তবে আগামিদিনে কংগ্রেস আরও সোচ্চার হবে এবং দেশের সামনে শক্তিশালী বিরোধীর ভূমিকায় দেখা যাবে তাদের। সেই কংগ্রেসের নায়ক হবেন রাহুল।