নয়া দিল্লি: সরকার বনাম বিচার ব্যবস্থার ‘ছায়া যুদ্ধ’ যেন থামার নামই নিচ্ছে না। আইনমন্ত্রী কিরণ রিজিজুর (Kiren Rijiju) বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে ঝড় তোলা মন্তব্যের পর এবার সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস একরকমভাবে হাইকোর্টের এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু বিচারপতিকে ‘নন পারফর্মার’ বলে আখ্যা দিল। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স বাড়ানো সংক্রান্ত একটি বিষয়ে তারা জানায়, এমনটা হলে অদক্ষ বিচারপতিদের কর্মজীবনের মেয়াদও বেড়ে যেতে পারে। আদপে একটি সংসদীয় কমিটির সামনে উচ্চ বিচার ব্যবস্থায় বিচারপতিদের অবসরের বয়স বাড়ানো নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় এমনই পর্যবেক্ষণ শোনায় কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। সূত্রের খবর, সেখানে তারা বলে, ‘অবসরের বয়স বাড়ানোর ফলে কিছু অযোগ্যর চাকরির মেয়াদ বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নন-পারফর্মিং এবং কম-পারফর্মিং বিচারপতিরা কাজ চালিয়ে যাবেন।’ নিঃসন্দেহে, এই মন্তব্য কেন্দ্র বনাম বিচার ব্যবস্থার তরজায় বারুদের মতো কাজ করতে পারে। যেহেতু এই বিভাগ কেন্দ্র সরকারেরই অঙ্গ, তাই অনেকেই ধরে নিচ্ছেন এই যুক্তি কেন্দ্রেরই।
এই প্রথম নয় যখন কেন্দ্র বনাম বিচার বিভাগ প্রকাশ্যে এল। সাম্প্রতিককালে অন্তত তিনবার কলেজিয়াম সিস্টেমকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরণ রিজিজু। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি বদল করা দরকার’। একইসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের জামিন সংক্রান্ত মামলা শোনাই উচিৎ নয়। বরং তার সাংবিধানিক বিষয় শোনা দরকার। একইসঙ্গে কলেজিয়াম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, কলেজিয়ামে বিচারপতিদের নিয়োগ করা হচ্ছে, ফলে তাতে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। পাশাপাশি, তিনি এর আগে বলেছিলেন সুপ্রিম এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের অবসরের মেয়াদ বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের।
অন্যদিকে বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল ও বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় (রাজ্যসভার চেয়ারম্যানও) সম্প্রতি সংসদে বলেছিলেন, “এখনও জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন নিয়ে সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার সময় রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে এই আইন বাতিল করেছিল, তা সংবিধানের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে বড়সড় আপোশ এবং সাধারণ মানুষের মতকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।” তবে এবার উচ্চ বিচার ব্যবস্থায় নাম না করে হলেও কিছু বিচারপতির কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই তরজাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল কেন্দ্র।