নয়া দিল্লি: সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনে রাজ্যসভায় একটি ব্যক্তিগত সদস্য বিল হিসেবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল ২০২০ পেশ করলেন বিজেপি সাংসদ কিরোডি লাল মিনা (Kirodi Lal Meena)। আর তারপরই রাজ্যসভায় শুরু হয়ে যায় বিশৃঙ্খলা। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির অর্থ হল, সকল ধর্মের ব্যক্তিদের জন্য একটিই আইন বলবৎ হবে। ধর্মের ভিত্তিতে কোনও আলাদা আইন প্রযোজ্য হবে না। এই বিলের বিরোধিতায় তিনটি প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয় রাজ্য সভায়। সেই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে তা দেশের অখণ্ডতাকে বিঘ্নিত করবে এবং দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকেও আঘাত করবে এই বিল।
তবে এই দেওয়ানি বিধির বিরোধিতায় প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও ৬৩-২৩ ভোটে তা খারিজ হয়ে যায়। এদিকে এই বিল নিয়ে হইচই বেঁধে যায় সংসদের উচ্চ কক্ষে। তবে একাধিক রাজনৈতিক দল এই বিলের বিরোধিতা করলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল যুক্তি দিয়েছেন, সংবিধানের নির্দেশক নীতির অধীনে থাকা কোনও বিষয়ে প্রশ্ন তোলা কোনও সদস্যের বৈধ অধিকার। তিনি বলেছেন,’কক্ষে এই বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হোক…এই পর্যায়ে সরকারের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো ও এই বিলের সমালোচনা করার চেষ্টা অযাচিত।’
এদিকে রাজ্যসভায় হই হট্টগোলের পর চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় ধ্বনি ভোটের জন্য এই বিল উত্থাপন করেন। সেখানে ২৩ জন এই বিলের বিরোধিতা করেন এবং ৬৩ জন এই বিলের পক্ষে ভোট দেন। লাইভ ল অনুযায়ী এক সাংসদ যুক্তি দিয়েছেন, ভারতের নাগরিকের উপর এই বিলের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাই জনসাধারণের সঙ্গে পরামর্শ না করে এই বিল পেশ করা যায় না। এদিকে সিপিএম সাংসদ জন ব্রিট্টাস আইন কমিশনের একটি রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কোনও প্রয়োজন নেই। এদিকে ডিএমকে-র তিরুচি শিবা বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। এছাড়াও একাধিক বিরোধী নেতা এই বিলের বিরোধিতায় সরব হন। এদিকে বিজেপি সাংসদ হরনাথ যাদব দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনার জন্য রাজ্য সভায় জ়িরো আওয়ার নোটিস দেন। উল্লেখ্য, গুজরাট নির্বাচনে বিজেপির ইস্তেহারে সেই রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর সে রাজ্যে বিজেপির ঐতিহাসিক জয়ের পরের দিনই রাজ্যসভায় এই বিল উত্থাপন করা হল। এদিকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির ইস্তেহারে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির উল্লেখ ছিল।