আহমেদাবাদ: ১৯৯০ সালে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের দাবি নিয়ে গুজরাটের সোমনাথ মন্দির থেকে রাম রথযাত্রা শুরু করেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর, বিহারে তৎকালীন লালুপ্রসাদ যাদব সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। যার ফলে, আচমকা সমাপ্তি ঘটেছিল সেই রথযাত্রার। এরপর, গত ৩৩ বছরে অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে, রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্কের অবসান ঘটেছে। অযোধ্যার ৫ একর জমির মালিকানা পেয়েছেন রামলালা। অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণও প্রায় সম্পূর্ণ। আদবানির সেই রথযাত্রার ৩৩ বছর পর, অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের ঠিক আগে, সোমনাথ মন্দির চত্বর থেকে ফের শুরু হয়েছে রামের নামে এক প্রচার যাত্রা। ৩০ অক্টোবর, গান্ধীনগর থেকে ‘রাম নাম মন্ত্র লিখন যজ্ঞ’ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কী এই ‘রাম নাম মন্ত্র লিখন যজ্ঞ’? গুজরাটের সোমনাথ মন্দির চত্বরে অবস্থিত রাম মন্দিরে, ভক্তদের জন্য ১০টি পুঁথি রাখা হয়েছে। ওই পুঁথিগুলিতে ভগবান রামের নাম খোদাই করছেন তাঁরা। ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন হবে। তার আগে রাম মন্দিরে পাঠানো হবে রামনাম লেখা পুঁথিগুলি। রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকাকালীন, গুজরাটের গির জেলায় সোমনাথ মন্দিরের বিপরীতে, ত্রিবেণী সঙ্গমের কাছে একটি নতুন রাম মন্দির তৈরি করেছিল শ্রী সোমনাথ মন্দির ট্রাস্ট। ২০১৭ সালে এই মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছিল।
সোমনাথ মন্দির এবং আরও বেশ কয়েকটি মন্দিরের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে শ্রী সোমনাথ মন্দির ট্রাস্ট। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং সেক্রেটারি হলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল। এখন এই ট্রাস্ট ভক্তদের রামের নাম লেখার এই প্রচারাভিযান চালু করেছে। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমনাথ মন্দির থেকে ভক্তদের সোমনাথের রাম মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বাস পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমনাথের রাম মন্দিরে রামের নাম লেখার জন্য বিশেষ বই এবং কলম রাখা হয়েছে। এই পুঁথিগুলিতে যে ভক্তরা রামের নাম লিখবেন, তাঁদের প্রত্যেককে খাবারও সরবরাহ করবে ট্রাস্ট।
গুজরাটের বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনের সময়, গুজরাটের প্রতিটি গ্রামে ‘উৎসবের পরিবেশ’ তৈরি করতে চান তাঁরা। তারই অংশ হিসেবে এই ‘রাম নাম মন্ত্র লিখন যজ্ঞ’ প্রচার শুরু করা হয়েছে। আরএসএস-এর প্রাক্তন কর্তা তথা বিজেপির রাজ্য সেক্রেটারি জাভেরিভাই ঠাকুর বলেছেন, “মানুষের মধ্যে হিন্দুত্বের চেতনা জাগিয়ে তুলতে আদবানি রাম রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞ, ট্রাস্ট এই যজ্ঞের মাধ্যমে তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” ট্রাস্টের অন্যতম সেক্রেটারি এবং গুজরাচের মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা যোগেন্দ্র দেশাই বলেছেন, “অযোধ্যায় রামমন্দির প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে দেখতে চান। কিন্তু সকলের পক্ষে তা নাও সম্ভব হতে পারে। তাহলে তাঁর ভগবানের কাছে পৌঁছবেন কী করে? ভগবানের নাম জপ করে। সোমনাথ মন্দিরে রামের নাম লেখার আলাদা তাৎপর্যও আছে। স্কন্ধ পুরাণে বলা আছে, রাম, লক্ষ্মণ ও জানকী প্রভাসক্ষেত্রে (সোমনাথ মন্দির সংলগ্ন অঞ্চল) এসেছিলেন।”