জ্যোতির্ময় রায়: যোগগুরু রামদেব রবিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে পত্র লিখে দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ওঠা পুরো বিতর্কটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে পতঞ্জলি যোগপিঠের লেটার প্যাডে লেখা এই চিঠিটি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন। উনি টুইটে লেখেন, “আমি আপনার চিঠি পেয়েছি।”
রামদেব চিঠিতে লিখেছেন, “আমি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং অ্যালোপ্যাথির বিরোধী নই। আমি মনে করি জীবনরক্ষা এবং শল্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথি অনেক উন্নতি করেছে এবং মানব সেবায় কাজ করছে। আমার যেই বক্তব্যটি উদ্ধৃত করা হয়েছে, তা একজন কর্মীদের বৈঠকের বক্তব্য, যেখানে আমি হোয়াটসঅ্যাপে আসা একটি সংবাদ পড়ে শোনাচ্ছিলাম। এই বক্তব্যে যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তার জন্য আমি দুঃখিত।”
চিঠিতে যোগগুরু আরও লেখেন, “কিছু অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান, আয়ুর্বেদ এবং যোগকে নকল বিজ্ঞান বলে অনাদর করা উচিত নয়, কারণ এতেও কোটি কোটি মানুষের ভাবাবেগ আহত হয়।” রামদেবের মতে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যদি বসন্ত, পোলিও ও যক্ষার মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসা আবিষ্কার করেছে, তেমনই যোগ, আয়ুর্বেদ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসার মতো ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রক্তচাপ, মধুমেহ, থাইরয়েড, আর্থারাইটিস, ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস, হাঁপানির মতো জটিলল এবং বংশানুগত রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং স্থায়ী সমাধান খুঁজে দিয়েছে।
রামদেব বলেন, “করোনাকালে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকরা যেভাবে নিজের জীবন সঙ্কটে ফেলে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, তার জন্য আমি তাঁদের সম্মান করি। তবে আমরাও আয়ুর্বেদ ও যোগের মাধ্যমে কোটি কোটি লোকের প্রাণ বাঁচিয়েছি, সেটিকেও সম্মান দেওয়া উচিৎ।”
উল্লেখ্য, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছিল যোগগুরু রামদেবের বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতেই মহামারি আইনে তাঁকে গ্রেফতার করার আবেদন জানিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। করোনাকালে নিরন্তর পরিশ্রমে বিধ্বস্ত, ক্লান্ত চিকিৎসকদের মনোভাবকে সম্মান দেখিয়েই রামদেবকে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।
তবে ইদানীংকালে অনেক নামী অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদেরও নিজের রোগীদের যোগাসন ও প্রাণায়াম করার সুপারিশ করতে দেখা গেছে, এমন কি তাঁরাও নিয়মিত যোগাসন আর প্রাণায়াম করে থাকেন।
রামদেবের পত্রে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন সন্তুষ্ট হলেও বিবাদ থামবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে। হর্ষবর্ধনকে লেখা চিঠির জবাবের অপেক্ষা না করে ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন রামদেবকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন।
করোনা কালে চিকিৎসা ব্যবস্থা যেখানে পঙ্গু হয়ে পড়ছে, চিকিৎসকেরা যখন একটানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিশ্রমে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন, সেই সময় চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মানব সেবায় বিঘ্ন ঘটানোর যুক্তি কোথায়!
আরও পড়ুন: ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনা টিকা পাবেন সকলে’, আশ্বাস কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রীর