কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তমলুক থেকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীও হয়েছেন তিনি। বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার দিন অভিজিৎ বলেছিলেন, বিচারপতির পদে থাকাকালীনই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, বিচারপতিদের রাজনৈতিক সংস্রব নিয়ে জোর চর্চা হয়েছে। বিচারপতিদের রাজনৈতিক যোগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এবার সেই বিতর্ককে আরও এক কদম এগিয়ে নিয়ে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টেরই আরেক বিচারপতি, চিত্তরঞ্জন দাশ। সোমবারই (২০ মে) ছিল তাঁর অবসর। অবসরের দিন তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব গঠন এবং তাঁর মধ্যে সাহস ও দেশপ্রেমের ভাব জাগানোর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর। প্রসঙ্গত, আরএসএস-এর রাজনৈতিক মুখই হল বিজেপি।
এদিন বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ জানান, একেবারে ছোটবেলা থেকেই তিনি আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আজ, আমাকে অবশ্যই আমার সত্যিকারের রূপ প্রকাশ করতে হবে। একটি সংস্থার কাছে আমার অনেক ঋণ আছে। আমি আমার শৈশব থেকে যৌবন অর্জন পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। এই সংস্থার কাছ থেকে আমি সাহসী, ন্যায়পরায়ণ হতে শিখেছি, সকলের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে শিখেছি এবং সর্বোপরি, যেখানেই কাজ করি না কেন, দেশপ্রেমের অনুভূতি এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে শিখেছি। স্বীকার করতেই হবে, আমি আরএসএসের একজন সদস্য।”
তবে, বিচারপতির পদে বসার পর, আরএসএস থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর আরও দাবি, দলমত নির্বিশেষে তিনি সমস্ত মামলা এবং মামলাকারীদের নিরপেক্ষভাবে মোকাবিলা করেছেন। তিনি বলেন, “কাজের জন্য, আমি প্রায় ৩৭ বছর ধরে নিজেকে আরএসএস-এর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। আমি আমার কর্মজীবনের কোনও অগ্রগতির জন্য আমার সংস্থার সদস্যপদ ব্যবহার করিনি। এটি আমাদের নীতি-বিরুদ্ধ। আমি সবার সঙ্গে সমান আচরণ করেছি। কমিউনিস্ট হোক, বিজেপি হোক বা তৃণমূলের লোক হোক, আমি কারও বিরুদ্ধে কোনও পক্ষপাতিত্ব করিনি। দুটি নীতির ভিত্তিতে আমি ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। একটি হল সহানুভূতি এবং দ্বিতীয়টি হল ন্যায়বিচারের জন্য আইনকে বাঁকানো যেতে পারে, আইনের সঙ্গে মানানসই করার জন্য ন্যায়বিচারের অদল-বদল ঘটানো যায় না।”
বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ আদতে ওড়িশার বাসিন্দা। ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে, তিনি বিচারক হয়েছিলেন। ওড়িশার বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাঁকে ওড়িশা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) পদে নিয়োগ করা হয়। ২০০৯-এর ১০ অক্টোবর, ওড়িশা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক পদে উন্নীত হয়েছিলেন তিনি। ২০২২-এর ২০ জুন, কলকাতা হাইকোর্টে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।