এতদিন ধরে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সেই সম্ভাবনাই বাস্তবের রূপ নিল। আজ সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধের ঘোষণা করলেন। তিনি জানিয়েছেন রাশিয়ার তরফে ইউক্রেনে মিলিটারি অপারেশন চালানো হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে চিন্তিত ছিল গোটা আন্তর্জাতিক মহল। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে ঠান্ডা লড়াইয়ের পর বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত সবচেয়ে বড় সংকট। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে আম জনতার দৈনন্দিন জীবনে। ভারতও তার ব্যতিক্রম হবে না। ভারতীয়দের ভাঁড়ারে টান পড়তে পারে কারণ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সকালেই সেনসেক্স ১৪০০+ পয়েন্ট এবং নিফটি ৪০০+ নেমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি প্রবল প্রভাব পড়বে। দাম বাড়তে পারে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে গম বিভিন্ন সামগ্রীর।
দাম বাড়তে পারে প্রাকৃতিক গ্যাসের
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে ইতিমধ্যেই অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৯৬.৭ ডলার। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এটাই সর্বোচ্চ দাম বলে জানা গিয়েছে। রাশিয়া অপরিশোধিত তেলের অন্যতম বড় উৎপাদক। তাই এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে তেলের দাম বেড়ে হতে পারে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার। অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি বিশ্বের জিডিপিতে বড় প্রভাব ফেলবে। জেপি মর্গ্যানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ব্যারেল প্রতি তেলের দাম হতে পারে ১৫০ ডলার। এর ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে হতে পারে ০.৯ শতাংশ। হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স (WPI) বাস্কেটে অপরিশোধিত তেলের ৯ শতাংশ শেয়ার থাকে। ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে ভারতের WPI ০.৯ শতাংশ বাড়বে। দাম বাড়তে পারে LPG এবং কেরোসিনের।
পেট্রল, ডিজেলের দামবৃদ্ধি
পেট্রল, ডিজেলের দামবৃদ্ধিতে গত এক বছর ধরে এমনিতেই নাস্তানাবুদ ভারতের আম জনতা। ফলত চিন্তা বাড়াচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দাম বাড়তে পারে পেট্রল, ডিজেলেরও। অতীতেও দেখা গিয়েছে অপরিশোধিত তেলের দামবৃদ্ধিতে ভারতে পেট্রল এবং ডিজেলের দাম বেড়েছে। ২০২১ সালে জ্বালানির রেকর্ড দাম বৃদ্ধি চাক্ষুষ করেছে। কিন্তু এই দামবৃদ্ধি থেকে মুক্তি নেই ভারতীয়দের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি তারই জানান দিচ্ছে। ভারতের মোট আমদানির ২৫ শতাংশ হল তেল। প্রয়োজনীয় তেলের ৮০ শতাংশই ভারত আমদানি করে। ফলে স্বভাবতই দাম বাড়তে পারে পেট্রল ডিজেলের।
গমের দাম বৃদ্ধি
করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বাজারে আগুন। এর উপর আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের পরিস্থিতির জন্য কৃষ্ণ সাগর থেকে যদি শস্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে খাদ্যশস্যের দাম তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। গম রপ্তানিকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। সেখানে ইউক্রেন চতুর্থ স্থানে। বিশ্বে গমের রপ্তানির ক্ষেত্রে চার ভাগের এক ভাগ গম রপ্তানি হয় এই দুই দেশ থেকে। রাষ্ট্রসংঘের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিমারির কারণে সরবরাহের শৃঙ্খলে প্রভাব পড়ায় ইতিমধ্যেই এক দশকের বেশি সময়ে এই প্রথম খাদ্যশস্য়ের দাম চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছে।
ধাতুর দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা
প্যালাডিয়ামের দাম বাড়তে পারে। অটোমোটিভ এক্সহস্ট সিস্টেম এবং মোবাইল ফোনে এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। রাশিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাবনার মধ্যেই সম্প্রতি এই ধাতুর দাম বেড়েছে। রাশিয়া বিশ্বের মধ্যে সবেচেয়ে বড় প্যালাডিয়াম রপ্তানিকারক।
আরও পড়ুন : Russia-Ukraine Conflict: ‘পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর’, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ভারতের