নয়া দিল্লি: সারদা মামলায় বড় অগ্রগতি। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট জানিয়েছে, সারদা তহবিল তছরুপ মামলায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের স্ত্রী নলিনী চিদম্বরম-সহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এঁরা সকলেই সারদা সংস্থার জালিয়াতিতে লাভবান হয়েছিলেন। ইডি জানিয়েছে, তহবিল তছরুপ প্রতিরোধ আইন বা পিএমএলএ-র অধীনে, সব মিলিয়ে ৬ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩.৩০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি এবং ৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই সকল সম্পত্তি সারদা গোষ্ঠী এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সুবিধা লাভ করেছেন এরকম ব্যক্তিদের মালিকানাধীন ছিল।
ইডি জানিয়েছে, এই সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের স্ত্রী। নলিনী চিদম্বরম ছাড়াও আরও যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন – ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকার, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার তথা সিপিআইএম-এর প্রাক্তন বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, অনুভূতি প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিকেশনের মালিক, অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত প্রমুখ। এরমধ্যে কর্তা দেবব্রত ওরফে নীতু সরকারের ১.০৮ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, তাঁর ৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এই টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই মামলায় এখনও পর্যন্ত মোট ৬০০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করল ইডি। তবে, এই আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার সঙ্গে এত বেশি পরিমাণ আর্থিক দুর্নীতি জড়িত যে, উদ্ধার হওয়া এই অর্থটা হিমশৈলের চূড়া ছাড়া কিছু নয় বলে মনে করছে ইডি।
ইডি জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা, বিরাট মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ২,৪৫৯ কোটি টাকা তুলেছিল। এর মধ্যে প্রায় ১,৯৮৩ কোটি টাকা এখনও পর্যন্ত ফেরত পাননি আমানতকারীরা। শুধু কিছু সুদের অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারি ধরা পড়েছিল। এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ কুনাল ঘোষ, শ্রীঞ্জয় বসু, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা রজত মজুমদার, ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার, তৎকালীন ক্রীড়া এবং পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শুধু বাংলা নয়, অসম-ওড়িশাতেও ছড়িয়ে ছিল এই কেলেঙ্কারি চক্র।
এই কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সারদা গোষ্ঠীর এই তহবিল তছরুপের তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। পাশাপাশি স্বল্প আয়ের বিনিয়োগকারীরা যাতে দেউলিয়া না হয়ে যান, তর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ কোটি টাকার একটি ত্রাণ তহবিলও তৈরি করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর বিভাগ এবং এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটও পৃথকভাবে এই কেলেঙ্কারি মামলার তদন্ত শুরু করেছিল। ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট, সারদা কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য পঞ্জি প্রকল্পের কেলেঙ্কারির বিষয়ে সমস্ত তদন্তের ভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছিল।