নয়া দিল্লি: চিনের নাম পর্যন্ত মুখে নিলেন না, কিন্তু সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মঞ্চে ঘুরিয়ে বেজিংকেই সতর্ক করলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বুধবার (২৯ মার্চ) নয়া দিল্লিতে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে উদ্বোধনী ভাষণ দেন অজিত ডোভাল। ভাষণে তিনি, সংগঠনের সদস্য দেশগুলির একে অপরের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখার আহ্বান জানান। অজিত ডোভাল বলেন, “এই বৈঠকের সনদে সদস্য দেশগুলিকে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা রাখা এবং রাষ্ট্রীয় সীমানার লঙ্ঘন না করা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ না করার বা বলপ্রয়োগের হুমকি না দেওয়া এবং সংলগ্ন অঞ্চলে একতরফা সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব জাহির না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।” নির্দিষ্ট করে কোনও দেশের নাম নেননি অজিত ডভাল। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যের লক্ষ্য যে চিন, তা বলাই বাহুল্য। গত কয়েক বছরের ডোকালাম, পূর্ব লাদাখ, তাওয়াং – একের পর এক সীমান্তবর্তী এলাকায় বেজিং-এর সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে নয়া দিল্লিকে।
এদিনের বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপরও জোর দিয়েছেন অজিত ডোভাল। এই ক্ষেত্রেও চিন-পাকিস্তানকে নিশানা করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। অজিত ডোভাল বলেন, এই ধরণের উদ্যোগের ক্ষেত্রে আলোচনা করা উচিত। প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকা উচিত এবং এই ধরণের উদ্য়োগ গ্রহণের সময়, সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা উচিত। প্রসঙ্গত, একেবারে শুরু থেকেই বারংবার চিন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছে নয়া দিল্লি। চিনের উদ্যোগে এই বহু দেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে, এই পথ তৈরি হচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দেওয়ার পাশাপাশি, এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ নিয়েও বৈঠকে যোগদানকারীদের সতর্ক করেন অজিত ডোভাল। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদে অর্থ সাহায়তা যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের থেকে কোনও অংশে কম অপরাধ নয়, তা স্পষ্ট করে দেন তিনি। অজিত ডোভাল বলেন, “আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষার জন্য সবথেকে গুরুতর হুমকি হল সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগান। উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, যে কোনও ধরনের নাশকতাই অযৌক্তিক।”
China, Pakistan join virtually at SCO NSA meet hosted by Indian NSA Ajit Doval pic.twitter.com/DOtEpgj4UC
— Sidhant Sibal (@sidhant) March 29, 2023
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন। এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্য আটটি দেশ – ভারত, চিন, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান। এই বছর ভারতই এই সংগঠনের সভাপতিত্ব করছে। চলতি নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ এবং কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্তারা। চিন ও পাকিস্তানের কর্তারা যোগ দিয়েছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। এসসিওর আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থার প্রতিনিধিও বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। এরপর, ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে নয়া দিল্লিতেই এসসিও সদস্য দেশগুলির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক আর ৪ এবং ৫ মে গোয়াতে হবে বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক। আর জুলাইয়ে হবে এসসিও শীর্ষ সম্মেলন।