নয়া দিল্লি: ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসে আত্মনির্ভরতার আরও এক কদম এগিয়ে গেল ভারত। রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা, ‘ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস ল্যাবরেটরিজ’ সামনে আনল দেশিয় প্রযুক্তিতে তৈরি এক শক্তিশালী ড্রোন। মজার বিষয় হল, শহিদ হওয়াই এই স্বদেশী ড্রোনের লক্ষ্য। কারণ, এটি একটি ডু-এন্ড-ডাই যুদ্ধাস্ত্র। অর্থাৎ, শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালানোর সময় নষ্ট হয়ে যায় ড্রোনটি নিজেও। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সময়, আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আত্মবলিদান দিতেন জাপানি যুদ্ধবিমানের চালকরা। এই আত্নঘাতী বাহিনীর নাম ছিল কামিকাজে। সেই থেকেই এই ধরনের ড্রোনগুলিকেও বলা হয় কামিকাজে ড্রোন। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষে এই ধরনের ড্রোন ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।
ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস ল্যাবরেটরিজের তৈরি কামিকাজে ড্রোনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দেশি শাহেদ ১৩৬’। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস ল্যাবোরেটরিজেরই নকশা করা এবং তৈরি করা ৩০ অশ্বক্ষমতার ওয়াঙ্কেল ইঞ্জিন। সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে, নিয়ন্ত্রকের থেকে ১,০০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়তে পারে এই ড্রোনটি। এটি একটি লয়টারিং ড্রোন, অর্থাৎ, দীর্ঘক্ষণ ধরে ড্রোনটি আকাশে এক জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে পারে। ধরা যাক, কোনও নির্দিষ্ট স্থানে কোনও লক্ষ্যবস্তু আঘাত করতে হবে। লক্ষ্যবস্তু, সেই জায়গায় আসার আগেই ড্রোনটি পৌঁছে গিয়ে আকাশে অপেক্ষা করতে পারে। লক্ষ্যবস্তু সেখানে এলে বিস্ফোরক-সহ তার উপর নেমে আসতে পারে। বহু দূর থেকে এই ড্রোনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেই সঙ্গে এগুলিকে মশা বা রাখির মতো ঝাঁকে-ঝাঁকে পাঠানো যায়। সেই ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের রাডার এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধোকা দিয়ে এই ড্রোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আক্রমণ করতে পারে।
এই শাহেদ ড্রোন নিয়ে গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস ল্যাবরেটরিজ-এর ডিরেক্টর, ড. অভয় পাশিলকর। তিনি বলেছেন, “ভারত এই সম্পূর্ণ দেশিয়ভাবে এই কামিকাজে ড্রোনগুলি তৈরি করেছে। এগুলি একুশ শতকের নতুন যুগের যুদ্ধাস্ত্র।” তিনি আরও জানিয়েচেন, শাহেদ ড্রোনগুলি লম্বায় প্রায় ২.৮ মিটার। ডানার দৈর্ঘ ৩.৫ মিটার। ওজন প্রায় ১২০ কেজি এবং ২৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে। ডা. পাশিলকর আরও জানিয়েছেন, এই ভারতীয় লটারিং ড্রোনগুলি প্রায় নয় ঘন্টা ধরে আকাশে উড়তে পারে। লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করার পর, নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন পেলেই এগুলি আত্মঘাতী অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আরও আকর্ষণীয় বিষয় হল, যেখানে জিপিএস কাজ করে না, সেখানেও শাহেদ ড্রোনগুলি কাজ করতে পারে। ভারতের ইসরোর তৈরি নাবিক (NAViC) ব্যবহার করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে এবং হামলা চালাতে পারে।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)