নয়া দিল্লি: ভালবাসার টানে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতেও এক মুহূর্ত ভাবেনি মেয়ে। সেই প্রেমিকের হাতেই কী নির্মমভাবে খুন হতে হল মেয়েকে, তার বয়ান শুনেই ভেঙে পড়লেন বাবা। তিনি আর কেউ নয়, শ্রদ্ধা ওয়াকারের (Shraddha Walker) বাবা বিকাশ ওয়াকার। গত ১৮ মে লিভ-ইন সঙ্গী আফতাব আমিন পুনাওয়ালা শ্বাসরোধ করে খুন (Murder) করে শ্রদ্ধাকে। এরপরে তাঁর দেহের ৩৫ টুকরো করে, ১৮ দিন ধরে দিল্লির নানা প্রান্তে ফেলে দিয়ে আসে সেই দেহাংশ। ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে আফতাবকে, জেরায় অপরাধ কবুলও করে নিয়েছে সে। তবে বুধবার শ্রদ্ধার বাবা যখন আফতাবের খুনের স্বীকারোক্তি শোনেন, তারপর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা বিকাশ ওয়াকার বলেন, “আমার সামনেই ও (আফতাব) খুনের স্বীকার করে। পুলিশ যখন প্রশ্ন করে যে আমায় চেনে নাকি, তখন ও উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, উনি শ্রদ্ধার বাবা। তারপরই হঠাৎ বলল শ্রদ্ধা আর নেই। আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যায় সেই মুহূর্তে, আর কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না আমি। তারপর ওকে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। ওর বয়ান শোনার মতো অবস্থা আমার ছিল না।”
তিনি জানান, প্রথমে যখন পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারেন শ্রদ্ধার সঙ্গে কী ঘটেছে, তখনও তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, “আমি পাথরের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। কী কী হয়েছিল ওর (শ্রদ্ধা) সঙ্গে, তা শোনাও কঠিন ছিল। যে অ্যাপার্টমেন্টে ওরা থাকত, সেখানেও যাওয়া কার্যত অসম্ভব ছিল। গোটা ঘটনাটিই আমার কাছে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।”
শ্রদ্ধার সঙ্গে আফতাবের সম্পর্ক মেনে না নিলেও, আগে একাধিকবার আফতাবের সঙ্গে কথা হয়েছিল শ্রদ্ধার বাবার, এমনটাই তিনি জানিয়েছেন। সেই সময়ে তাঁকে সুস্থ, স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছিল। এই যুবকই যে তাঁর মেয়েকে খুন করে ৩৫ টুকরো করে ফেলবে, তা কল্পনারও অতীত ছিল। তবে শ্রদ্ধা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আফতাবের উপরে সন্দেহ হয়েছিল শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ ওয়াকারের।
তিনি বলেন, “আমি যখন বলি যে শ্রদ্ধার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কথা তুমি জানাওনি কেন? তোমরা তো আড়াই বছর ধরে লিভ-ইনে রয়েছো। আমি ওর বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তখন ও আমায় বলে, কেন আমি আপনাকে জানাব যখন আমরা আর সম্পর্কেই নেই। এরপর থেকেই সন্দেহ হয় আমার। আমি পুলিশকে জানাই যে আফতাব সমস্ত কথা মিথ্যা বলছে। যদি ও শ্রদ্ধাকে ভালবাসে ও আড়াই বছর ধরে লিভ ইন সম্পর্কে থাকে, তবে ওর দেখভাল করার দায়িত্বও আফতাবের। কী করে ও বলতে পারে, এটা ওর দায়িত্ব নয়।”
শ্রদ্ধার বাবা জানান, ২০২০ সালে আফতাবের সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন, সেই সময়ই তিনি সম্পর্ক নাকচ করে দিয়েছিলেন এবং নিজের সম্প্রদায়ের কাউকে বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছিলেন শ্রদ্ধাকে। কিন্তু সে কথা শোনেনি শ্রদ্ধা, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে তাদের সঙ্গে শ্রদ্ধার কথাবার্তাও বন্ধ ছিল।