নয়া দিল্লি: বাংলার পরিস্থিতি ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের থেকেও খারাপ অবস্থায়। শাসকদলের মদতেই চলছে ভোট পরবর্তী হিংসা। মঙ্গলবার অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বাংলা নিয়ে এরকমই একগুচ্ছ নালিশ জানালেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়ি থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু বলেন, “বিরোধী নেতা হিসাবে কী ভাবে কাজ করব জানিয়ে এসেছি। সংবিধান মানছে না রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গ নিজেকে স্বাধীন দেশ মনে করছে। তা চলবে না।” একইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, শাহ-নাড্ডার দেখানো পথেই চলবেন তিনি। ‘একক’ দিল্লি সফরে শুভেন্দুর এই বক্তব্যে কোথাও কি দিলীপ ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদারদের জন্য কোনও বার্তা লুকিয়ে, সে প্রশ্ন তুলেছে কেউ কেউ।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিনই যখন কলকাতায় হেস্টিংসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলের শীর্ষস্তরের রাজ্য ও জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করছেন। তখনই সে বৈঠক ছেড়ে দিল্লিতে সর্বভারতীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বেড়াচ্ছেন শুভেন্দু। সকালে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিকেলে বৈঠক রয়েছে জেপি নাড্ডার সঙ্গে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে সময় দিয়েছেন বলে জানান শুভেন্দু। সর্বভারতীয় নেতাদের দেখানো পথেই রাজ্যে সংগঠনকে চালিত করা হবে, এমনও জানিয়েছেন রাজধানীতে দাঁড়িয়ে। তাঁর এই দিল্লি সফর নিয়ে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “শুভেন্দু তো জানে মিটিং আছে। তাও দিল্লি গিয়েছে। কেন গিয়েছে তা জানি না। দিল্লির নেতারা বলতে পারবেন।”
Met the Honourable Union Home Minister @AmitShah Ji .
Discussed on several matters and seeked blessings for Bengal .
Honourable HM assured, he was and he will be there for Bengal always . pic.twitter.com/K7fzCjjNCu— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) June 8, 2021
টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে শুভেন্দু অধিকারী জানান, “আমি এখানে বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হওয়ার পর মোদীজী-নাড্ডাজী-অমিত শাহজীর আশীর্বাদ নিতে এসেছি। ওনাদের আশীর্বাদ নিয়ে ওনাদের গাইডেন্স নিয়ে সে পথেই চলব। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তাঁরা ভাবছেন।” এদিন বারবার ভোট পরবর্তী হিংসাকে সামনে তুলে এনেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, বিজেপিকে ভোট দিয়ে যাঁরা আক্রান্ত, সেই মানুষগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সবরকম চেষ্টা করছেন তিনি। বিজেপিও চেষ্টা চালাচ্ছে পুরোদমে। দিল্লির নেতাদের সঙ্গে তা নিয়ে কথাও হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুখবর! অক্সিজেন পাইপ লাইনের কাজ শেষ, শীঘ্রই শম্ভুনাথ পণ্ডিতে চালু হচ্ছে একমো হাব
‘রাজ্যে ৩৫৬-র থেকেও খারাপ পরিস্থিতি’র ব্যাখ্যা হিসাবে শুভেন্দুর দাবি, “বাড়ি ঘর লুট হচ্ছে, ২৫ জন মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন, কেশপুরের একটা গ্রামে বলা হয়েছে ১৮ জনকে চা পর্যন্ত দেওয়া যাবে না। এ কোনও সভ্য সমাজে আমরা রয়েছি? বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গাদের সামনে রেখে করা হচ্ছে এসব। তৃণমূল কংগ্রেস তাতে মদত দিচ্ছে। না পারলে পুলিশকে এগিয়ে দিচ্ছে।”
একইসঙ্গে ত্রিপল চুরি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে হওয়া এফআইআর নিয়েও এদিন মুখ খোলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। বলেন, “আমি এটা উপেক্ষা করছি। পশ্চিমবাংলার একটা আট বছরের বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করুন এই এফআইআরটা। আমাদের পরিবারের যে ঐতিহ্য, তা কার আছে? ব্রিটিশ জেলে থেকেছে এ পরিবারের লোক। আমরা সরকারি দলের দয়াতে নেই। আজ বড় বড় কথা। আমাকে কেউ তাড়িয়ে দেয়নি। আমি সরকারি দলের বাইরে গিয়ে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর দল ২১৩টা আসন পেয়েছে তাঁকেই হারিয়েছি। অভিযোগের গুরুত্ব থাকে এমন অভিযোগ করুন।” শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, “ভুললে চলবে না মানুষই শেষ কথা বলে। ২৩৫-এর দম্ভও মানুষ ভেঙেছিল, ২১৩ দম্ভও মানুষ ভাঙবে।”
সোমবারই তৃণমূল ভবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় রাজনীতির স্তরে তৃণমূলের পদচারণ নিয়ে বলেছিলেন। অন্য রাজ্যে রাজনীতির ক্ষেত্রে এক-দু’টো আসন নয়, আরও বৃহৎ পরিসরই লক্ষ্য বলে জানিয়েছিলেন তৃণমূলের নব নির্বাচিত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এদিন দিল্লিতে বসে তার জবাবে শুভেন্দু বলেন, “ওই দলে তো আমি ছিলাম। আমাদের হাত তুলে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। সে হাত তোলাতে কে ছিল না। মনুসিংভি, মল্লিকার্জুন খাড়গে, ফারুক আবদুল্লাহ, শরদ পাওয়ার, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, বদরুদ্দিন আজমল, চন্দ্রবাবু নাইডু, স্ট্যালিনজী ছিল। ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ১৯ জানুয়ারি ২০১৯। তারপর তো ৩৪ থেকে কমে ২২। কুঁজোর যদি চিৎ হয়ে শোওয়ার ইচ্ছা হয় তাতে যা হয়, তৃণমূলের সর্বভারতীয়ও পদও তাই। গরুর গাড়ির হেডলাইট।”