Sitaram Yechury: অজাতশত্রু সীতারাম, সিপিআইএমে অবসান সুরজিৎ ঘরানার

Sep 12, 2024 | 10:00 PM

Sitaram Yechury: কংগ্রেস থেকে সমাজবাদী পার্টি, দলের বাইরেও বিরাট গ্রহণযোগ্যতা ছিল সীতারামের ইয়েচুরির। এতটাই অজাতশত্রু ছিলেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক। তাঁর আগে এই ভূমিকায় দেখা যেত হরকিষেণ সিং সুরজিৎকে। সীতারামের প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে সিপিএম-এ অবসান ঘটল সেই সুরজিৎ ঘরানার।

Sitaram Yechury: অজাতশত্রু সীতারাম, সিপিআইএমে অবসান সুরজিৎ ঘরানার
সদাহাস্যময় ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি
Image Credit source: PTI

Follow Us

নয়া দিল্লি: ‘সীতারাম ইয়েচুরি, আপনাকে আমি কখনও ভুলব না। কখনও না!’ বলতে বলতে কান্নায় গলা বুজে এসেছিল সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদবের। রাজ্যসভা কক্ষে, তাঁর পাশেই সামনের সারিতে বসতেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক। সেটা ছিল ২০১৭ সালের ১০ অগস্ট। রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে সেটাই ছিল সীতারামের শেষ দিন। সিপিআইএম-এর রীতি অনুযায়ী, কোনও নেতাকেই সংসদের উচ্চকক্ষে দুইবারের বেশি পাঠানো হয় না। সীতারামের ক্ষেত্রেও তা হয়নি। তবে মজার বিষয় হল, তাঁর নিজের দল না চাইলেও বিরোধী দলের নেতারা ভীষণভাবে চেয়েছিলেন যাতে সংসদে থেকে যান সীতারাম ইয়েচুরি। কেরল সিপিআইএম সীতারামকে মনোনয়ন দিতে চায়নি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সীতারামকে ফের মনোনীত করার মতো শক্তি ছিল না সিপিআইএম-এর। কিন্তু কংগ্রেস সেই প্রয়োজনীয় সমর্থন দিতে চেয়েছিল। এমনই ছিল সীতারামের ম্যাজিক। এতটাই অজাতশত্রু ছিলেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক।

সীতারামের জন্যই রাজ্যসভা কক্ষে দাঁড়িয়েই রামমোহন যাদব বলেছিলেন, দেশের সংবিধান সংশোধিত হয়, সিপিআইএম-এর সংবিধান সংশোধন করা যায় না? শুধু রামমোহন যাদবই নয়, ওই দিন রাজ্যসভা থেকে সীতারামের বিদায় নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন কংগ্রেসের তৎকালীন রাজ্যসভার নেতা, গুলাম নবি আজাদও। যে রাহুল গান্ধীর বিরোধিতা করে কংগ্রেস ছেড়েছেন গুলাম নবি আজাদ, সেই রাহুল গান্ধীও সীতারাম ইয়েচুরিকে ডাকতেন ‘চিফ’ বা ‘প্রধান’ বলে। দলের বাইরে এমনই ছিল তাঁর গ্রহণযোগ্যতা।

এমনকি, কংগ্রেস দলের অন্দরে অনেক নেতারই ক্ষোভ ছিল, রাহুল নাকি অনেকটাই সীতারামের কথাতেই চলতেন। রাজধানীতে কান পাতলে শোনা যায়, বর্তমানে রাহুল গান্ধীর যে রাজনৈতিক পরিপক্কতা দেখা যাচ্ছে, তার পিছনে সীতারামের অবদান অনেকটাই। ইন্দো-মার্কিন পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইউপিএ-২ সরকার ছেড়ে সিপিআইএম বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও, প্রকাশ কারাত ছিলেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক। অথচ, সিপিআইএম-কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে জোটে রাখার জন্য সেই সীতারামেরই দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রণব তাঁকে বলেছিলেন দলকে বোঝাতে, এই পদক্ষেপ করল বাংলায় শেষ হয়ে যাবে সিপিআইএম। সীতারাম তাঁর মতো করে চেষ্টা করেছিলেন, তবে শেষ রক্ষা করতে পারেননি।

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর, বিরোধী জোট গঠনেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। ২০১৯ সালের ভোটের আগেই জোট প্রায় তৈরি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু, সেই সময় পুলওয়ামা হামলা এবং বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের জেরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছিল। হাওয়া ঘুরে গিয়েছিল মোদী সরকারের দিকে। এর পাঁচ বছর পর তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। সেই জোটের গঠনেও বড় ভূমিকা ছিল সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদকের। নীতীশ, লালুপ্রসাদ থেকে শুরু করে এমকে স্টালিন, অখিলেশ যাদবদের সকলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সদাহাস্যময় সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির।

সীতারাম ইয়েচুরির আগে সিপিআইএম নেতাদের মধ্যে এই ভূমিকায় ছিলেন হরকিষেণ সিং সুরজিৎ। আর তারপর দেশের সকল ধর্মনিরপেক্ষ দলের মধ্যে এই সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা ছিল সুরজিতের যোগ্য শিষ্য সীতারাম ইয়েচুরিরই। তিনি চলে যাওয়ার পর, জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনে এই ভূমিকা নেওয়ার মতো আর কোনও সিপিআইএম নেতা রইল কিনা, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কাজেই সীতারামের প্রয়াণ, শুধু বাম রাজনীতির জন্যই নয়, সামগ্রিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পরিসরের জন্যই বড় ক্ষতি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Next Article