নয়া দিল্লি: এসএসসি মামলায় যোগ্য অযোগ্যদের বাছাইয়ের দায়িত্ব কার? তা নিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির শুরুতেই রাজ্য-কমিশনের দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়। রাজ্যের তরফ থেকে প্রথমেই বলে দেওয়া হয়, কে যোগ্য, আর কে অযোগ্য তার তা দেখার দায়িত্ব কমিশনের, রাজ্যের নয়। তবে এদিন শুরু থেকেই রাজ্য সুপার নিউমেরিক পোস্ট নিয়ে সওয়াল করা শুরু করে। সুপার নিউমেরিক পোস্ট অর্থাৎ অতিরিক্ত শূন্যপদে হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের বিরোধিতা করে রাজ্য। রাজ্যের তরফে এদিন সওয়াল করেন রাকেশ দ্বিবেদী।
প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। তবে ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিলের সময়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চও সুপার নিউমেরিক পোস্টের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। কার সুপারিশে এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখার কথা বলে আদালত। সেসময়ে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, নিশ্চয় অর্থ দফতর শিক্ষা দফতরের কোনও উচ্চ পদস্থ কর্তা, আমলা এর নেপথ্যে জড়িত। সেক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থে এহেন আমলাদেরও হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারবে সিবিআই। এদিন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য এই নির্দেশেরই তীব্র বিরোধিতা করে।
রাজ্যের বক্তব্য, যে অতিরিক্ত শূন্যপদ রাজ্যের তরফে তৈরি করা হয়েছিল, তা কেবল ‘ওয়েটিং লিস্টে’ থাকা যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের জন্যই। তিনি জানান, ৬৮৬১ টি শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে অযোগ্যদের ঢোকানোর কোনও প্রশ্নই উঠছে না। যেখানে এই শূন্যপদ তৈরির করার পিছনে কোনও খারাপ অভিসন্ধি ছিল না, সেই কেন সিবিআই তদন্তের নির্দেশ? তখন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, হাইকোর্ট কি কোনও অপরাধ খুঁজে পেয়েছে? রাজ্যের তরফে বলা হয়, ‘না’।
রাজ্যের তরফে আইনজীবী এনকে কউল আদালতে সংবিধানের ২৬৫ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করেন। ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে মন্ত্রিসভায় একটি আলোচনা হয়েছিল, আর সে ক্ষেত্রেই অনুমতির প্রয়োজন ছিল। বিচারব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। যেহেতু এই শূন্যপদে কোনও নিয়োগই হয়নি, তাই এক্ষেত্রে সংবিধান এড়ানোর কোনও প্রশ্নই উঠছে না।
আইনজীবী কউল আদালতে প্রশ্ন করেন, যদি তাই-ই হয়, তাহলে গোটা অর্থ দফতর, মন্ত্রিসভা, অ্যাডভোকেট জেনারেল সকলেই সিবিআই তদন্তের আওতায় পড়ে যাবেন। যেখানে অপরাধেরই কোনও প্রমাণ নেই, সেখানে সবাই কীভাবে তদন্তের আওতায় পড়তে পারেন? তাহলে তো সংসদীয় গণতন্ত্র কোথায় দাঁড়াবে?
তবে হাইকোর্টের নির্দেশের ফলে যে ভাবে চাকরি গিয়েছে, তাতে শিক্ষক-পড়ুয়ার অনুপাত নিয়েও সমস্যা হচ্ছে বলে আদালতে সওয়াল করে রাজ্য।