নয়া দিল্লি: দীর্ঘ ১০ মাস ধরে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত আটকে আন্দোলন চালাচ্ছে কৃষকরা (Farmers Protest)। এর জেরে সীমান্ত লাগোয়া সড়কগুলি বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কৃষকদের এই পথ আটকে আন্দোলনের এ বার সমালোচনা করল শীর্ষ আদালতও। এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)-র তরফে বলা হয়, “এভাবে চিরকাল পথ আটকে আন্দোলন চলতে পারে না।”
গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষ ভাগ থেকে তিন কৃষি আইন(Farm Laws)-র বিরোধিতা করে দিল্লির তিন সীমান্ত- সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর সীমান্ত দখল করে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে পঞ্জাব, হরিয়ানা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা। প্রায় ১০ মাস কেটে যাওয়ার পর আন্দোলনের ব্যপ্তি কিছুটা কমলেও এখনও সীমান্ত খালি করেনি আন্দোলনকারী কৃষকরা। এরফলে নিত্যদিন যাতায়াতের জন্য দিল্লি, নয়ডা, হরিয়ানাবাসীদের যে দীর্ঘ যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে, তা নিয়েই একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়।
এ দিন ওই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জয় কউলের বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, হাইওয়েগুলি চিকালের জন্য এভাবে বন্ধ করে রাখা যায় না। এই ইস্যুটি বিচারবিভাগীয় মঞ্চে বা সংসদে আলোচনার মাধ্য়মে সমাধান করে নেওয়া উচিত। বিচারপতি কউল দিল্লি, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ সরকারকে জানান যে, সুপ্রিম কোর্টের তরফে ইতিমধ্যেই এই আইনে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে এবং রাজ্য সরকারের দায়িত্ব সেই নির্দেশকে কার্যকর করা।
বলে রাখা ভাল, এই বিচারপতি কউলই গতবছর শাহিনবাগ আন্দোলন সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতেও বলেছিলেন, আন্দোলনের নামে জনসাধারণের রাস্তা আটকে রাখা যায় না। নির্দিষ্ট কোনও একটি জায়গায় আন্দোলন হওয়া উচিত।
এ দিনের মামলার শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শীর্ষ আদালতকে জানান যে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যে উচ্চ-স্তরীয় কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল, তাদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেছে আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলি। তিনি সুপ্রিম কোর্টে অনুরোধ জানান যে, আন্দোলনকারী সংগঠনগুলি যেন এই বিষয়ে জবাব দেয় এবং আলোচনায় অংশ নেয়। এর প্রেক্ষিতে বিচারপতিদের বেঞ্চের তরফে সলিসিটর জেনারেলকে এই মর্মে একটি আবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
গত মার্চ মাসেই সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন বিপণন পেশার সঙ্গে জড়িত নয়ডার বাসিন্দা মনিকা আগরওয়াল। রিট পিটিশনে জানান, তিনি একজন একক অভিভাবক (সিঙ্গেল প্যারেন্ট) এবং প্রায়সময়ই পেশাগত কারণে বা স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তাঁদের দিল্লি যেতে হয়। সীমান্তে বিপুল যানজটের কারণে বর্তমানে দিল্লি যাওয়া তাঁদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ মাত্র ২০ মিনিটের যাত্রাপথ অতিক্রম করতেই কমপক্ষে ২ ঘণ্টা সময় লাগছে।
প্রথম শুনানির সময়ই আবেদনকারী শীর্ষ আদালতকে জানান, এর আগে পথ অবরোধ সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে আদালত, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বাস্তবায়নের কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। আবেদনের শুনে শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছিল, এটি স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা। সম্প্রতিই হরিয়ানা সরকারের তরফে একটি হলফনামা জমা দিয়ে জানানো হয়েছে যে, তারা আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে পথ অবরোধ প্রত্যাহার করার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: Cyclone Shaheen: ‘গুলাবের’ পর এ বার শক্তি বাড়াচ্ছে ‘শাহিন’, আছড়ে পড়বে কি বাংলায়?