নয়া দিল্লি: যৌন পেশাকে আর বেআইনি বলা চলবে না। বৃহস্পতিবার যৌন পেশা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India)। দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, বাকি পেশার মতো যৌন পেশাও একটি পেশা এবং যৌনকর্মীদেরও সমান অধিকার ও মর্যাদা রয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হয় তারা যেন যৌনকর্মীদের কাজে হস্তক্ষেপ বা তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে।
বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ যৌন পেশা ও যৌনকর্মীদের সম্পর্কে মোট ছয়টি নির্দেশিকা জারি করে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে যৌনকর্মীদের অধিকার সুরক্ষা করা যাবে বলেই মত সুপ্রিম কোর্টের। তিন বিচারপতির বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “আইনের চোখে যৌনকর্মীরাও সমান সুরক্ষার অধিকারী। যদি একজন যৌনকর্মী প্রাপ্তবয়স্ক হন এবং নিজের সম্মতিতেই যৌনতা বিক্রি করেন, তবে পুলিশ বিনা কারণে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যাবে না।”
সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, দেশের সমস্ত নাগরিকেরই মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করার অধিকার রয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই যৌনপল্লিতে তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় অকারণে যৌনকর্মীদের হেনস্থা, গ্রেফতার করা উচিত নয় বলেই জানায় সুপ্রিম কোর্ট। যৌন পেশাকে বৈধ বললেও যৌনপল্লি চালানো যে বেআইনি, সে কথাও মনে করিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত।
যৌনকর্মীদের মধ্যে যাঁরা সন্তানের মা, তাঁদের জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষণ রেখেছে শীর্ষ আদালত। তিন বিচারপতির বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, শুধুমাত্র যৌন পেশার সঙ্গে যুক্ত, এই যুক্তিতে সন্তানকে তাঁর মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া অনুচিত। বিশেষ কোনও কারণ ছাড়া সন্তানদের মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলেই জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে যৌনকর্মীরা যদি তাঁদের বিরুদ্ধে ঘটা কোনও অপরাধের অভিযোগ নিয়ে থানায় যান, তা গুরুত্ব সহকারে শোনা ও যথাযথ পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোনও যৌনকর্মী যদি শারীরিক নিগ্রহ বা অন্য কোনও অপরাধের অভিযোগ আনেন, তবে দ্রুত শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যৌনকর্মীদের পরিচয় গোপন রাখারও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
গোটা বিষয়ে কেন্দ্রের মতামতও জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ২৭ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেই দিন কেন্দ্রের মতামত শোনা হবে শীর্ষ আদালতে।