নয়াদিল্লি : সিবিআই খাঁচাবন্দি তোতাপাখি। কয়লা কেলেঙ্কারির মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের সেই মন্তব্যের পর আট বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে মনে হচ্ছে কিছুই বদলায়নি। আবার সেই প্রশ্নটাই উঠতে শুরু করেছে সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশের পর। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের তদন্তে সাফল্য হার কেমন, তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে। অনেকেই মনে করেন, সিবিআইয়ের হাতে যে মামলাগুলি যায়, সেগুলিতে সাফল্য অনেক কম। এবার এই গুঞ্জনের সত্যতা যাচাই করে দেখতে চাইছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মামলাগুলিতে সাফল্যের হার সংক্রান্ত তথ্যে সুপ্রিম কোর্টে জমা করতে হবে। শুক্রবার সিবিআই ডিরেক্টরকে এই নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। গোয়েন্দা সংস্থার সাফল্য হারের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে, তার মূল্যায়ন করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জমা পড়ে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সিবিআইয়ের দায়িত্বে থাকা একটি তদন্ত ৫৪২ দিন ধরে আটকে রয়েছে। এই আবেদনটি দেখার পরই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ডিরেক্টরকে নির্দেশ দেন সিবিআইয়ের যাবতীয় তদন্তের সাফল্য হারের রিপোর্ট জমা করতে হবে। সিবিআই কতগুলি মামলায় অভিযুক্তকে আদালতে দোষী প্রমাণ করতে পেরেছে, সেই সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সংস্থাকে আরও মজবুত করতে সিবিআই ডিরেক্টর কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সেই সংক্রান্ত তথ্যও জানাতে হবে। এছাড়া, সিবিআইয়ের অধীনে থাকা কতগুলি মামলা, কতদিন ধরে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে আটকে রয়েছে, সেই সব বিস্তারিত জানানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস কে কউল এবং বিচারপতি এম এম সুনদ্রেশের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র একটি মামলা নথিভুক্ত করা এবং তদন্ত করার মধ্যেই সিবিআইয়ের দায়িত্ব সীমাবন্ধ থাকে না। অভিযুক্ত আদালতে ঠিকঠাক দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে কি না, সঠিক সাজা পাচ্ছে কি না… সেই সব দিকেও নজর রাখাটা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তব্য।
সুপ্রিম কোর্টে দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, “যে মামলাগুলি সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত তথ্য আমরা দেখতে চাই। সিবিআই কতগুলি মামলায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছে, কতগুলি মামলা আদালতে কতদিনে জন্য আটকে রয়েছে এবং নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে সিবিআই কতগুলি মামলায় সফল হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাফল্য হার দেখতে চাই।”
আট বছর আগে কয়লা ব্লক বণ্টন মামলার শুনানি চলাকালীন সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিল শীর্ষ আদালত। আদালতে মামলা নথিভুক্ত হতে দেরি হওয়ার পিছনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘কর্তব্য পালনে গাফিলতির’ কথা উল্লেখ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআইকে খাঁচায় বন্দী তোতাপাখির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। তখন দিল্লির তখতে দ্বিতীয় উইপিএ সরকার। সুপ্রিম কোর্টের ধমক খেতে হয়েছিল মনমোহন সিংয়ের সরকারকেও। সম্প্রতি মাদ্রাজ হাইকোর্টেও তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সিবিআইকে এই নির্দেশ দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট মাদ্রাজ হাইকোর্টের সেই পর্যবেক্ষণের কথাও উল্লেখ করে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের পক্ষে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সঞ্জয় জৈন। তাঁর বক্তব্য, ভারতের মতো ব্যবস্থায়, মামলায় সাফল্য হারের উপর ভিত্তি করে সংস্থার দক্ষতা বিচার করা উচিত হবে না। আরও অনেকগুলি বিষয় এখানে কাজ করে। তবে সুপ্রিম কোর্টের সাফ বক্তব্য, এই একই মাপকাঠির উপর বিশ্বের অন্যান্য সংস্থাগুলিকেও বিচার করা হয়। তাহলে সিবিআইকে কেন করা হবে না? আরও পড়ুন : ‘বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়নি’, নয়া তথ্য প্রযুক্তি আইনের প্রয়োজনীয়তা বোঝাল কেন্দ্র