নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর), গোটা দেশের চোখ ছিল সুপ্রিম কোর্টের দিকে। প্রধান বিচারপতির এজলাসে ছিল আরজি কর মামলার শুনানি। আর এই একই দিনে, আরও এক হাইপ্রোফাইল যৌন নির্যাতনের মামলায় জামিন পেলেন মামলার প্রধান অভিযুক্ত। বিচারের কার্যক্রমে দেরি হওয়ার কারণেই তাঁকে জামিন দেওয়া হল। মামলাটি ২০১৭ সালের কেরলের এক অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থার। এই মামলার মূল অভিযুক্ত সুনীল এনএস ওরফে পালসার সানিকে এদিন জামিন দিল বিচারপতি এএস ওকা এবং বিচারপতি পঙ্কজ মিথালের এক বেঞ্চ। বেঞ্চ জানিয়েছে, বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে দীর্ঘ সময় লাগবে এবং ইতিমধ্যেই সাত বছর কারাবাস হয়ে গিয়েছে পালসার সানির। তাই তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। এর আগে, কেরল হাইকোর্ট পালসার সানির জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। হাইকোর্টের সেই আদেশকে শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তিনি।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, জামিনের শর্ত আরোপ করার জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে পালসার সানিকে ট্রায়াল কোর্টে হাজির করতে হবে। শীর্ষ আদালতরে পক্ষ থেকে ট্রায়াল কোর্টের কাছে কঠোর শর্ত চাইবার অধিকার দেওয়া হয়েছে সরকার পক্ষকে। এর আগের শুনানিতে, এই মামলায় এখনও পর্যন্ত কতজন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে, কেরল সরকারের পক্ষে হাজির হওয়া কৌঁসুলিকে তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন ট্রায়াল কোর্টে চলা মামলার ‘স্ট্যাটাস’ যাচাই করে পালসার সানির জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে শীর্ষ আদালত। ২০২৩ সালের মে মাসে, শীর্ষ আদালত ওই বছরের জুলাইয়ের মধ্যে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল। পরে আদালত ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছিল।
২০১৭ সালে এই হাইপ্রোফাইল মামলা প্রকাশ্যে এসেছিল। এক জনপ্রিয় মালয়ালম অভিনেত্রী অভিযোগ করেছিলেন, কোচিতে তাঁকে অপহরণ করা হয় এবং যৌন নির্যাতন করা হয়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কেরল পুলিশের তদন্ত শুরু করে। তদন্তে অভিযুক্ত হিসেবে জনপ্রিয় মালয়ালম অভিনেতা দিলীপ, পালসার সানি-সহ মোট ৮ জনের নাম উঠে এসেছিল। এরপর অভিনেতা দিলীপের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, আদালতের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার ঠিক আগে আরও ৪১ জন অতিরিক্ত সাক্ষীর বয়ান নথিবদ্ধ করার পরিকল্পনা করে কেরল সরকার। সেই বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন দিলীপ। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, এটা বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা। তবে, সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, তারা ট্রায়াল কোর্টের বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে না।
গোপনে অভিযোগ জানানোর পর, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পরিচয়ও দিয়ে্ছিলেন নির্যাতিতা অভিনেত্রী। তাঁর নাম জানার পর হইচই পড়ে গিয়েছিল মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। এরপরই, মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলাদের যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য, বিচারপতি হেমা কমিটি গঠন করেছিল কেরল সরকার। চলতি বছরের ১৯ অগস্ট প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ২৩৫ পৃষ্ঠার সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু পুরুষ প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেতাদের খপ্পরে রয়েছে মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। তারা যে কাউকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কীভাবে, কেরলের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, তাদের যৌন নির্যাতন ও শারীরিক হামলার শিকার হতে হয়, তার স্পষ্ট বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কেরল সরকারকে, এই রিপোর্টে উল্লিখিত অপরাধগুলির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেরল হাইকোর্ট।