লখনউ: ভারতকে বিশ্ব গুরু করে তোলার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু প্রান্তিক ভারতে এখনও শিক্ষার অভাব প্রকট। তন্ত্র-মন্ত্র, কালো জাদুর মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের অভাব নেই। তাদের বিভিন্ন কাজকর্মে মাঝেমাঝেই গোটা বিশ্বের সামনে ভারতীয় সমাজকে বিব্রত হতে হয়। এমনই এক ঘটনা সামনে ঘটল উত্তর প্রদেশের প্রান্তিক জেলা সোনভদ্রে। ভূত-প্রেত সন্দেহে এক মহিলার উপর যারপরনাই নির্যাতন করেছে গ্রামবাসীরা, এমনই অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে ঘোড়াওয়াল থানা এলাকার পদবনিয়া গ্রামে।
ওই মহিলাকে গ্রামবাসীরা ‘ডাইনি’ এবং ‘পেতনি’ বলে অভিযুক্ত করেছিল বলে দাবি করেছেন আক্রান্ত মহিলার ছেলে। তাঁর বয়ান অনুসারে গ্রামবাসীরা এক ওঝার কথায় প্রথমে ওই মহিলার মাথা ন্যাড়া করে। তারপর তাঁর মুখে চুন ও কালি লাগানো হয়। এরপর জপমালা, কাজল ও জুতোর মালা পরিয়ে তাঁকে সারা গ্রাম ঘোরানো হয়। তাঁর মা এই চরম হেনস্থা সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেলেছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে। তাকে জুটেছিল অকথ্য গালিগালাজ, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও!
নির্যাতিতার ছেলে আরও জানিয়েছেন, গ্রামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য ওই মহিলাকে দায়ি করা হয়েছিল। তারপর তাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর মাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল উন্মত্ত জনতা। গোটা ঘটনার পর তাঁরা ঘোড়াওয়াল থানা এবং মির্জাপুর থানায় গিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন নির্যাতিতার ছেলে। কিন্তু, পুলিশ তাঁদের সাহায্য় করেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই নক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২১ মে তারিখে। তবে সম্প্রতি ওই ঘটনার ভিডিয়ো স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে। তাদের চাপেই পুলিশ এই ঘটনার বিষয়ে তৎপর হয়েছে।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনার বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মোট সাতজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যে ওঝার নির্দেশে এই কাজ করেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ, সেই ওঝাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই এলাকায় একটি ‘ভূত তাড়ানোর মন্দির’ও আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রামবাসীরা অসুস্থ হলে প্রথমে ওই মন্দিরে গিয়ে তন্ত্রমন্ত্রের সাহায্য নেন, তাতে কাজ না হলে ডাক্তারের কাছে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার পিছনে সেই মন্দিরের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে তারা। বস্তুত, সোনভদ্র জেলার সঙ্গে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশের আরও চারটি জেলার সীমান্ত রয়েছে। গোটা এলাকাটিই উপজাতি অধ্যুষিত। তাই এখানকার মানুষ তন্ত্রমন্ত্রে গভীর বিশ্বাসী। তবে, পুলিশ কেন সমমতো ব্যবস্থা নিল না, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।