চেন্নাই: অতি ভারী বৃষ্টিতে ভাসছে দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ু (Tamil Nadu)। ৩৮ টি জেলার মধ্যে ৩৬টিই একটানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টাও বিপদের ঘনঘটা থাকবে রাজ্য জুড়ে। আবহাওয়া দফতর (IMD) সূত্রে ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা (Red Alert)। সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রাজধানী চেন্নাই(Chennai)-তেই, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৪.২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
একটানা অতি ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে চেন্নাইয়ের একাধিক নীচু জায়গা সম্পূর্ণরূপে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত জল বের করতে তিনটি জলাধারের গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির জলে ডুবে গিয়েছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। অতি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার খবর পেয়েই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন(MK Stalin)-র সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। তিনি রাজ্যের পরিস্থিতির খোঁজ নেন এবং পূর্ণ সহায়তার আশ্বাসও দেন। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকার্যে নেমেছে এনডিআরএফ(NDRF)-র চারটি দল।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিগত এক সপ্তাহে ৩৩৪.৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। আগামী দুইদিনও রাজ্য়জুড়ে বৃষ্টি জারি থাকবে বলেই জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতাও।
কোয়েম্বাটোর, তিরুনেলিভেলি, ভিল্লুপুরম, এরোদে, পুদুকোটেটাই ও পেরামবালুরেই স্বাভাবিকের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার থেকেই চেন্নাই ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সূচনা হয়।রাতের মধ্যেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং সারারাত ধরেই মুষলধারে চলে বৃষ্টি। ফলে রবিবার সকাল থেকেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের অধিকাংশ এলাকা। ২০১৫ সালের বন্যার পর এটিই সর্বাধিক বৃষ্টি। প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই বিপদের আশঙ্কায় বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
টানা বৃষ্টির জেরে চেন্নাইয়ের আশেপাশের হ্রদগুলি ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে। চেম্বারমবাক্কাম হ্রদ থেকে ইতিমধ্যেই জল ছাড়া শুরু হয়েছে। বেশ কিছু নিচু এলাকায় জল জমে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। তামিলনাড়ুর উত্তর উপকূল দিয়ে অতি ভারী বৃষ্টির জেরে চেন্নাই সহ আরও তিন জেলার (তিরুভাল্লুর, চেঙ্গলপাট্টু এবং কাঞ্চিপুরম) স্কুল, কলেজ আগামী দুই দিন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রাস্তায় নৌকা নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায় বাসিন্দাদের। ভারী বৃষ্টিতে ও গাছ উপড়ে পড়ায় কমপক্ষে ৬টি সাবওয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি উদ্ধারকার্যে হাত লাগিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। ইতিমধ্যেই তাদের চারটি দল মাদুরাই, চেঞ্গালপেট ও তিরুভালুরে পৌঁছেছে উদ্ধারকার্যে সাহায্যের জন্য। এছাড়াও থান্জাভুর ও কাড্ডালোর জেলায় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল পাঠানো হয়েছে। কোয়েম্বাটোর, কারুর, তিরুনেলিভেলি, ভিল্লুপুরম সহ একাধিক জেলাজুড়ে মোট ৫ হাজার ত্রাণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। গ্রেটার চেন্নাই কর্পোরেশনের তরফেও ১৬০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ১০৭০ নম্বরে ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি জরুরি নম্বরও চালু করা হয়েছে চেন্নাইয়ে বৃষ্টি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা ও অভিযোগ শোনার জন্য।
রবিবারই মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন চেন্নাই ও পার্শ্ববর্তী শহরতলির জলমগ্ন এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন এবং আধিকারিকদের দ্রুত জল বের করার নির্দেশ দেন। তিনি কোলাথুর, পেরাম্বুর, কোসাপেট ও ওট্টেরিতে শুকনো খাবার ও ত্রাণ বিলি করেন।