নিজস্ব প্রতিবেদন: ঘরে-বাইরে সীমান্ত সমস্যা। এবার আন্তঃসীমান্ত সমস্যা নিয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল পূর্ব ভারত। অসম-মিজোরাম (Assam-Mizoram) সীমান্ত লাগোয়া একটি কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্রকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি এতটাই স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে, সামাল দিতে রবিবার কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয় অসম এবং মিজোরাম সরকার। সূত্রের খবর, আজ দুই রাজ্যের মুখ্য সচিবদের নিয়ে বৈঠক করতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভল্লা।
কীভাবে সূত্রপাত?
গত শনিবার সীমান্ত এলাকায় একটি কোভিড পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি করে মিজোরাম সরকার। সীমান্ত থেকে আসা ট্রাক চালকদের কোভিড পরীক্ষা করতেই ওই কেন্দ্র তৈরি করা হয়। কিন্তু বাধ সাধে বিজেপি শাসিত অসম সরকার। তাদের তরফে দাবি করা হয়, কোভিড কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে অসম সীমান্তে। পাল্টা আক্রমণ শানায় বিজেপি সমর্থিত মিজোরামের জ়োরামথাঙ্গার সরকার। তোপ, জবরদখল করে নিজেদের জমি বলতে চাইছে অসম প্রশাসন।
দুই রাজ্যের প্রশাসনিক স্তরে চাপান-উতরের মাঝে মিজোরাম থেকে একদল দুষ্কৃতী অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অসমের লয়লাপুরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা ট্রাক চালকদের উপর হামলা চালায়। ১৫টির বেশি ঘরবাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেওয়া বলে অভিযোগ। পাল্টা প্রতিরোধ গড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। রাতাবাড়ি, পাথরকান্দি এলাকা-সহ করিমগঞ্জ জেলার বেশ কিছু জায়গায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষে ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে খবর। দুই গোষ্ঠী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মিজোরামের ভৈরাঙ্গতে গ্রাম এবং অসমের লয়লাপুরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি:
অসমের সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকারের দাবি, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অসমের কাচার ও মিজোরামে কোলাসিব জেলায় দুই তরফেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। সূত্রের খবর, রবিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেছেন অসমের মুখ্য়মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জ়োরামথাঙ্গার সঙ্গেও সীমান্তে উদ্ভূত সমস্য়া নিয়ে সোনোয়ালের কথা হয়। অসম সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আন্তঃরাজ্য সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে এবং সীমান্ত সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে দুই রাজ্যই। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী জ়োরামথাঙ্গাও বিষয়টিকে নজরে আনতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই সংঘর্ষে অসম সরকারের ‘একতরফা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আচরণকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন জ়োরামথাঙ্গা।
পুরনো ক্ষত:
অসম-মিজোরাম আন্তঃসীমান্ত সমস্যা নতুন নয়। দুই রাজ্যের সীমান্ত এলাকা প্রায় ১৬৪.৬ কিলোমিটার। বিতর্কিত জায়গা নিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে একাধিক আলোচনা হয়েছে দুই রাজ্য়ের। তবে, আশু সমাধান এখনও পর্যন্ত মেলেনি। প্রায়শই বিতর্কিত এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চলতি মাসে মিজোরামের মামিত জেলায় থিঙ্গলুন গ্রামের কিছু কাঁচা বাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অসমের প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। পাল্টা অভিযোগ, অসমের করিমগঞ্জ সীমান্তের বির্তকিত এলাকায় ওই বাড়িগুলি তৈরি করা হয়। এ নিয়ে অশান্তির আবহ তৈরি হয় দুই রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায়।
রাজনৈতিক ইস্যু:
একটি বিজেপি শাসিত রাজ্য, অন্যটি বিজেপি সমর্থিত। স্বভাবতই, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিড়ম্বনায় মোদী সরকার। শাসক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (MNF)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মিজোরাম সরকারে রয়েছে পদ্ম শিবির। তবে, এই ঘটনাকে অসম সরকারের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ করেছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এমএনএফ-র বিধায়ক লালরিন্তুলাঙ্গা সাইলোর তোপ, মিজোরাম এবং সে রাজ্যের মানুষ অসমের শত্রু নয়। সীমান্তবর্তী রাজ্য় হওয়ায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মিজোরাম। অসমের আসন্ন নির্বাচনে বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, অসম সরকারের উদাসনীতাকে দায়ী করেছে অসমের প্রদেশ কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেবের কটাক্ষ, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে কোনও উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের দেখা নেই।