নয়া দিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিবিসি তৈরি দুই পর্বের ডকুমেন্টারি সিরিজ ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’-এর প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পর, ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায়, এই বিতর্কিত ডকুমেন্টারি সিরিজটি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া বা এসএফআই। এই পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে এদিন এসএফআই-এর বেশ কয়েকজন সদস্য-সহ জনা বারো শিক্ষার্থীকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। পুলিশের দাবি, তারা জামিয়ার ক্যাম্পাসের বাইরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনও।
ফেসবুকে এই বিশেষ প্রদর্শনের কথা ঘোষণা করেছিল ভারতের ছাত্র ফেডারেশন। জানিয়েছিল এদিন সন্ধ্যা ৬টায় ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শিত হবে। তারপরই, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক নোটিশ জারি করে জানায় যে, অনুমোদন ছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জমায়েত করা বা কোনও ফিল্ম প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না। আরও জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পড়াশোনার পরিবেশ যাতে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন নষ্ট না করতে পারে, তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিন দুপুরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে হাজির হয় দিল্লি পুলিশের বিশাল বাহিনী। তাদের পরণে ছিল নীল রঙের দাঙ্গা মোকাবিলার পোশাক ও সাজ-সরঞ্জাম। সঙ্গে ছিল কাঁদানে গ্যাসের গোলা ছোড়ার কামানও।
গত সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শনের আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদের কার্যালয়ের ইন্টারনেট এবং বিদ্যুৎ সংযোগ – দুইই বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে জেএনইউ কর্তৃপক্ষ জানায় ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শিত হলে ক্যাম্পাসে শান্তি ও সম্প্রীতি ব্যাহত হতে পারে। তাই, যারা এর প্রদর্শন করবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে দমে না গিয়ে, ফোনে ও ল্যাপটপে ডকুমেন্টারি সিরিজটি দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়। অন্ধকারের মধ্যেই শয়ে শয়ে ছাত্র-ছাত্রী ছাত্র সংসদের কার্যালয়ের বাইরে ভিড় জমায়। সন্ধ্যায় মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা।
বিবিসির এই ডকুমেন্টারিটি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। সরকার এই ডকুমেন্টারিটি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অংশ বলে দাবি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ডকুমেন্টারির লিঙ্ক পোস্ট করা হলে, সেগুলি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে। এর আগে, গুজরাট দাঙ্গার তদন্তে নরেন্দ্র মোদী নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। গত বছর, সুপ্রিম কোর্টও তাঁকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।